অন্যান্য

টেক্সাসের স্কুলে গুলির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৭ মে ২০২২;  আপডেট: ০২:৩৮, ২৯ অক্টোবর ২০২২

টেক্সাসের স্কুলে গুলির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১

চলতি বছরের ১৪৪ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ২১৩টি বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ছবি : বিবিসি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য টেক্সাসের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি স্কুলে গুলি চালানোর ঘটনায় এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্র। নিহতদের মধ্যে ১৯ জনই শিশু বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিও শহরের ইউভ্যালডি এলাকার রব এলিমেন্টারি স্কুলে সংঘটিত ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত শিশুদের বেশিরভাগই ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী এবং ওই স্কুলের শিক্ষার্থী। নিহত অন্য দুজন একই স্কুলের শিক্ষক।

এদিকে, ওই ঘটনার সময় পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা বলছেন, পুলিশ সদস্যরা সময়মতো সক্রিয় ভূমিকা নিলে ওইদিন হতাহতের সংখ্যা আরও কম হতো।

প্রকাশিত সূত্রের বরাতে জানা যায়, সালভাদর রামোস নামের ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর মঙ্গলবার ওই স্কুলে প্রবেশ করে। স্কুলভবনে ঢুকে সে ভেতরে ঢোকার পথ বন্ধ করে দেয়। এরপর সে তার কাছে থাকা এআর-১৫ রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়ে ২১ জনকে হত্যা করে। এ সময় আরও অন্তত ১৭ জন আহত হয়। এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের সঙ্গেও তার গুলি বিনিময় হয়। পুরো ঘটনা প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে চলে। পরে পুলিশ জানালা ভেঙ্গে ভবনের ভেতরে ঢুকে একটি শ্রেণিকক্ষে অবস্থানরত ওই কিশোরকে গুলি করে হত্যা করে। বুধবার টেক্সাসের জননিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক স্টিভ ম্যাক্রো এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের ভেতরে গুলিবর্ষণের ঘটনা শুরুর পর আশেপাশে জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে স্কুলে ঢুকে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে এমন কোনও উদ্যোগ না নিয়ে অনেক দেরিতে স্কুলে ঢোকে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, বন্দুকধারী ওই কিশোর স্কুলভবনে ঢুকে নিজেকে ভেতর থেকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ কারণে পুলিশ সদস্যদের স্কুলভবনে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সময় লেগেছে।

সান অ্যান্টোনিও শহর থেকে ৯০ মাইল দূরের ইউভ্যালডি এলাকাটি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের খুব কাছাকাছি। এখানকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই হিস্পানিক-আমেরিকান। নিহত ওই বন্দুকধারী ইউভ্যালডির স্থানীয় বাসিন্দা এবং সেখানকারই একটি হাইস্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। স্কুলের পড়ালেখা শেষ না করে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় সে। এর আগে সে কোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো না এবং তার মানসিক কোনও ধরনের সমস্যা ছিলো বলেও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ওই কিশোর সম্প্রতি ১৮-তে পা দিয়েছে এবং তার জন্মদিনে সে দুটি এআর-১৫ রাইফেল কিনেছে। তবে তার বন্দুক কেনার বিষয়ে কিছু জানতেন না বলে রামোসের দাদা রোনাল্ড রেইস বুধবার জানান। তিনি বলেন, ‘যদি আমি এ বিষয়ে জানতাম, তাহলে আগেই পুলিশকে খবর দিতাম।’

মঙ্গলবারের এ ঘটনার পর রব এলিমেন্টারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ সময় নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে অনেক অভিভাবককে ডিএনএ পরীক্ষাও করাতে হয়।

এদিকে, ওই স্কুলে গিয়ে গুলি চালানোর আগে রামোস নিজ বাসায় তার দাদিকে মাথায় গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি জরুরি সেবা নম্বর ৯১১-এ ফোন দেন। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট বুধবার এসব তথ্য জানান।

জানা গেছে, জার্মানিতে বসবাসরত এক কিশোরীর সঙ্গে রামোসের অনলাইনে পরিচয় হয়। দুজনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। দাদিকে গুলি করার পর সে এ ঘটনা ওই কিশোরীকে মেসেজ পাঠিয়ে জানায়। এরপর সে একটি স্কুলে ঢুকে গুলি চালাতে যাচ্ছে বলেও মেসেজে উল্লেখ করে। হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মেটা এসব মেসেজ উদ্ধার করে।

জানা যায়, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে বসবাসরত ওই কিশোরীর সঙ্গে রামোস গত ৯ মে থেকে ফেসবুকে চ্যাটিং করা শুরু করে। তখন থেকে তারা প্রায় প্রতিদিনই যোগাযোগ করতো। এ সময় তারা একসঙ্গে গেইম খেলতো এবং রামোস তাকে সেখানকার জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো। এ সময় তাকে স্বাভাবিক আর হাসিখুশি এক কিশোর বলেই মনে হয়েছে বলে ওই কিশোরী জানায়। তবে রামোস তার দাদিকে নিয়ে অভিযোগ করতো বলেও জানায় সে।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুব শিগগিরই ইউভ্যালডিতে যাবেন বলে জানিয়ে বলেন, ‘একই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই এখন তাদের পাশে থাকা উচিত।’ একইসঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘...এবং আমাদের এখন এ প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে, যা আমাদের আরও আগেই করা উচিত ছিলো, তা আমরা কবে করবো। পুরোপুরিভাবে এটা বন্ধ করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তেই থাকবে।’

এ ছাড়াও মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর কানেক্টিকাটের ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস মারফি এক সিনেট অধিবেশনে আবারও দেশটির আগ্নেয়াস্ত্র আইন কঠোর করার জোরালো আবেদন জানান। এর আগে কানেক্টিকাটেরই একটি স্কুলে একই ধরনের হামলার ঘটনার পরও তিনি একই আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকানরা বরাবরই এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে আসছেন। আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত আইন কঠোর করার বিরোধিতা করে এভাবে কখনো জনগণকে নিয়ন্ত্রণ বা অপরাধ দমন করা যাবে না বলে ঘটনার পর স্বয়ং টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ মন্তব্য করেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও এ বিষয়ে বরাবরই দ্বিধাবিভক্ত।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক অঙ্গরাজ্য কানেক্টিকাটের নিউ টাউনের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে গুলি চালানোর একইরকম একটি ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২০ জনই ছিলো ওই স্কুলের শিক্ষার্থী যাদের বয়স ছিলো ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে। বাকি ৬ জন ছিলেন ওই স্কুলের কর্মী। স্যান্ডি হুকের ওই ঘটনার পর ইউভ্যালডির এ ঘটনাই দেশটির প্রাথমিক স্কুলে ঢুকে এমন হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। তবে ২০২২ সালের এ সময়ের মধ্যেই দেশটির প্রাথমিক স্কুলে এ ধরনের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে আরও ৩০টি।

এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে এখন স্কুল ছাড়াও অন্যান্য পাবলিক প্লেসে বন্দুকধারীর গুলিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। ইউভ্যালডির এ ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগেই নিউ ইয়র্কের বাফেলোর একটি সুপার মার্কেটে এক বন্দুকধারীর গুলিতে ১০ জন নিহত হন। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের মতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চলতি বছরের ১৪৪ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ২১৩টি বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড বলতে এখানে বন্দুকধারীর গুলিতে চার বা তারও বেশি সাধারণ মানুষের আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাকে ধরা হয়েছে।

সূত্র: সিএনএন।