স্বদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ

স্বদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২;  আপডেট: ০১:০৭, ২৯ অক্টোবর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ

বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসায় দলের নেতা-কর্মীরা তাকে বলেন `মৃত্যুঞ্জয়ী` মানবী। ছবি : বাসস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি মধুমতী নদীবিধৌত তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের অন্যতম প্রাচীন এ দলের নেতৃত্বে আছেন ১৯৮১ সাল থেকে। ৭৫ বছরের জীবনে অনেক সঙ্কট ও চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন।

শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন কাটে।

রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় পারিবারিক আবহে খুব অল্প বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতিতে পদচারণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হন। ওই সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধু সপরিবার নিহত হওয়ার পর প্রবাসে শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। বিদেশে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এর পর থেকে তিনি এই পদে আছেন। তার ওপর একাধিকবার হামলা চালানো হলেও বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসায় দলের নেতা-কর্মীরা তাকে বলেন 'মৃত্যুঞ্জয়ী' মানবী।

দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে সেদিন লাখো জনতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাকে স্বাগত জানায়। উপস্থিত জনতার অভিবাদনের জবাবে সেদিন তিনি বলেছিলেন, 'বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হতে আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।'

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।'

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক নানা আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমানে চতুর্থ দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোচনা সভা ও দোয়াসহ নানা কর্মসূচি

দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ বুধবার বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়া-প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি সারা দেশে সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।

শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটি আলোচনা সভা, গৃহহীনদের মধ্যে গৃহ এবং দুস্থ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত সাধারণ আলোচনায় অন্যান্য বছরের মতো বাংলায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।

সূত্র : বাসস, বিবিসি, ইত্তেফাক ও প্রথম আলো।