রাজনীতি

চীনা প্রেসিডেন্টের মালয়েশিয়া সফর

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি থেকে এশিয়াকে রক্ষার প্রত্যয় শি জিনপিংয়ের

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১৭ এপ্রিল ২০২৫;  আপডেট: ১৫:২২, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি থেকে এশিয়াকে রক্ষার প্রত্যয় শি জিনপিংয়ের

মালয়েশিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্টকে (বামে) স্বাগত জানান দেশটির রাজা সুলতান ইব্রাহিম ইসকান্দা (মাঝে) ও প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম (ডানে)। ছবি : ডয়চে ভেলে।

চলমান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া সফর করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল বুধবার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিম ইসকান্দা। পরবর্তীতে প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। 

মূলত, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করতে এ সফর শুরু করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে তিনি ভিয়েতনাম সফর শেষ করেছেন এবং পরবর্তীতে কম্বোডিয়া সফরে যাবেন। 

এদিকে, এমন সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ সফর শুরু করলেন যখন চীনা অর্থনীতির উপর মার্কিন চড়া বাণিজ্য শুল্কের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি এক নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে। 

এ অবস্থায় গত বছর চীন-মালয়েশিয়া বাণিজ্যিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি প্রসঙ্গে দেশ দুটির এ সম্পর্ককে ‘নতুন স্বর্ণালি যুগ’ বলে অভিহিত করেন শি। এ সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আরও নানা বিষয়ে চীনের সঙ্গে নতুন সমঝোতা চুক্তি সম্পাদনের কথা উল্লেখ করেন মালয়েশিয়ার রাজা ইব্রাহিম। 

অন্যদিকে, বৈশ্বিক অর্থনীতির এ নাজুক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর এবং তাদের বাণিজ্যিক সহযোগী হওয়ার আশ্বাস জানান চীনা প্রেসিডেন্ট শি। তিনি বলেন, ‘একত্রে আমাদের পক্ষে এশিয়ার উজ্জ্বল বাণিজ্যিক ভবিষ্যত রক্ষা করা সম্ভব।’ 

এ সময় চীনা বাজারে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের সহজ প্রবেশের প্রতিজ্ঞা করে তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বর্তমানে যে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে, তা কাটিয়ে উঠতে চীন ও মালয়েশিয়া যৌথভাবে কাজ করতে পারে। আর, এভাবে এ অঞ্চলকে রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’  

এদিকে, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি এক গভীর সংকটে পতিত হয়েছে। পশ্চিমা বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের দরকার স্থিতিশীলতা, আস্থা এবং সমজাতীয় লক্ষ্য। আর, এর সবই আমরা চীনের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি।’ 

এ অবস্থায় উভয় দেশই বেশ অনেকগুলো সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বলে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। 

এর আগে, গত সোমবার ভিয়েতনাম সফরেও তিনি দেশটির সঙ্গে অনেকগুলো বাণিজ্য চুক্তি করেন। এ সময় চীনা বাজারে দেশটির কৃষি পণ্যের প্রবেশ বাড়ানোর বিষয়ে আশ্বাস দেন প্রেসিডেন্ট শি। 

অন্যদিকে, মালয়েশিয়া সফরে আসিয়ানভুক্ত (দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে উন্মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে আলোচনার আশা করছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া আসিয়ানের সদস্য। আর, এ বছরের সম্মেলনের আয়োজক দেশ হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।  

তবে, চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরকে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলার একটি কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্প। 

উল্লেখ্য, বর্তমান মার্কিন চড়া শুল্ক নীতির বড় ধরনের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর উপর। কারণ, এরইমধ্যে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উপর যথাক্রমে ৪৬ এবং ৪৯ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ার উপর আরোপ করা হয়েছে ২৪ শতাংশ শুল্ক। 

যদিও আগামী ৯০ দিনের জন্য নতুন এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু, কোনো দেশই এ থেকে রেহাই পাবে না অর্থাৎ তা আবারও কার্যকর করা হবে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

সূত্র : ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরা।