আসিয়ান সম্মেলন
মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান মালয়েশিয়ার
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ২৩:১২, ২৫ মে ২০২৫

আগামীকাল সোমবার আসিয়ানের সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে।
মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। চলতি মে মাসের শেষে এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় আজ রবিবার এ আবেদন জানালো দেশটি।
এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে আজ কুয়ালালামপুরে আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হোসেন।
এমন সময় তিনি এ বৈঠক ডাকলেন, যার একদিন পর অর্থ্যাৎ আগামীকাল সোমবার আসিয়ানের সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত ফোরাম 'অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস' বা আসিয়ানের এবারের আয়োজক ও আহ্বায়ক দেশ মালয়েশিয়া।
এদিকে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হোসেন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, 'আমরা মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে এবং যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ও আওতা বাড়াতে দেশটির অংশীজনদের আহ্বান জানিয়েছি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং মিয়ানমারের জনগণের দুর্দশা কমাতে দীর্ঘ এবং সমস্যাসংকুল এ পথ পেরিয়ে সমাধানের উপায় খোঁজার অনুরোধ জানিয়েছি।'
এ ক্ষেত্রে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ও আওতা বর্তমান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতার প্রভাব বর্তমানে এর প্বার্শবর্তী দেশগুলোতেও পড়তে শুরু করেছে। দেশটি থেকে প্রায়ই শরণার্থীরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে অনুপ্রবেশ করছে। এর ফলে, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ অনেক বেড়ে গেছে।
এ অবস্থায় এ সমস্যা রোধে জোট থেকে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে এর আগে মালয়েশিয়ার তরফ থেকে জানানো হয়। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সহিংসতা কমানো ও মানবিক সহায়তার উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে মালয়েশিয়া জানায়।
কিন্তু, উভয় পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি থাকায় সংঘাতে লিপ্ত দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনার আয়োজন করা কঠিন হবে বলে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হোসেন জানান।
তবে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দেশটির সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো।
অন্যদিকে, মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালের এপ্রিলে দেশটির জান্তা সরকার আসিয়ানের সঙ্গে পাঁচ-ধাপবিশিষ্ট একটি শান্তি চুক্তি করে। কিন্তু, এ চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় আসিয়ানের বাৎসরিক সম্মেলনে মিয়ানমারকে অংশ নিতে দেওয়া হয় নি।
এদিকে, চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ জন নিহত হয় এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এ পরিস্থিতিতে সে সময় বহু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর চলমান গৃহযুদ্ধে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।পরবর্তীতে, এ যুদ্ধবিরতি মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ কখনোই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থা জানায়।
এ অবস্থায় গত এপ্রিলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যাংককে মিয়ানমারের সরকার প্রধান জেনারেল মিন আং লাইয়েং এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার সরকারকে যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানান।
একইসঙ্গে, আসিয়ানের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানোসহ দেশটিকে ধীরে ধীরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন আয়োজনের দিকে মনোযোগী হওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, আসিয়ানভুক্ত একটি দেশের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এ জোট কোনো সদস্যরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে এলো।
সূত্র : আল-জাজিরা।