তুরস্কে বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধান নিহত
তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫; আপডেট: ১৫:৫২, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদ দেশকে একতাবদ্ধে জাতিসংঘের চলমান প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ছবি : বিবিসি।
লিবিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আলি আহমেদ আল-হাদ্দাদ এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বিমানে থাকা আরও ৪ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাও নিহত হন।
আজ বুধবার লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দিবেইবেহ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গতকাল আঙ্কারা থেকে ফ্যালকন ৫০ নামের বিমানটি যাত্রা করে। কিন্তু, যাত্রার ৪২ মিনিট পর স্থানীয় সময় ৮টা ৫২ মিনিটে বিমানটির সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ার্লিকায়া জানান।
তবে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ত্রিপলিভিত্তিক এ ব্যক্তিগত বিমানটি থেকে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তীতে, আঙ্কারার দক্ষিণ-পশ্চিমের হাইমানা জেলায় বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী যেকোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা জনগণকে জানানো হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে, যান্ত্রিক ক্রটিই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, তুরস্কের দলকে তদন্ত কাজে সহায়তায় লিবিয়া থেকেও আঙ্কারায় একটি তদন্ত দল পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
দুর্ঘনাকবলিত বিমানটিতে সেনাপ্রধান আহমেদ আল-হাদ্দাদের সঙ্গে থাকা লিবিয়ার চার সেনা কর্মকর্তাসহ বাকি তিন বিমান ক্র’র সবাই নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে সেনা সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক আলোচনায় অংশ নিতে আঙ্কারা সফরে গিয়েছিলো লিবিয়ার এ প্রতিনিধি দলটি।
লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতীয় ঐক্যের সরকারের প্রধানমন্ত্রী দিবেইবেহ এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ দুর্ঘটনা লিবিয়ার জন্য একটি বড় ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লিবিয়া এমন কিছু ব্যক্তিকে হারালো যারা দেশের জন্য অকৃত্রিমভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন।’
এ অবস্থায় নিহতদের স্মরণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে লিবীয় সরকার। এ সময় দেশটির জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখাসহ সব ধরনের সরকারি অনুষ্ঠান ও উদযাপন বাতিল করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মুয়াম্মর গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর থেকে একের পর এক গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে লিবিয়া। সে সময় উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্ধসহ নানা বিদেশি শক্তির প্রভাবও দেখা যায়।
বর্তমানে দেশটির পশ্চিমাংশ বিশেষত ত্রিপলি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দিবেইবেহের নিয়ন্ত্রনাধীন। জাতিসংঘের সহায়তায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি (জিএনইউ) নামের এ সরকার গঠিত হয়।
অন্যদিকে, লিবিয়ার পূর্বাংশ বিশেষত বেনগাজির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল স্ট্যাবিলিটির (জিএসএস) হাতে। জিএসএসের প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামিদ মূলত রাশিয়া সমর্থিত সরকার।
তুরস্ক বরাবরই দিবেইবেহের সরকারকে সমর্থন ও সুরক্ষা দিয়ে আসছে। একইসঙ্গে, ত্রিপলিভিত্তিক জিএনইউ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে আঙ্কারা।
সূত্র : বিবিসি, ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরা।



