ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ
রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধে নতুন চুক্তিতে ইইউ
অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫; আপডেট: ০০:৩৩, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ব্রাসেলসে আজ চুক্তির বিষয়টি জানান ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট আর্সেলা ভন ডার লিয়েন। ছবি : সিএনএন।
রাশিয়া থেকে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে সব ধরনের প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধে একটি চুক্তি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের উপর থেকে ইউরোপের দেশগুলোর নির্ভরশীলতা বন্ধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০২৭ সালের শেষে রাশিয়া থেকে পুরোপুরি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে দেশগুলো।
আজ বুধবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ চুক্তির বিষয়টি জানানো হয়। ইইউভুক্ত দেশগুলোর সরকারের প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় সংসদ আজ সকালে এ চুক্তিতে পৌঁছে বলে জানানো হয়।
মূলত, গত জুনে ইউরোপীয় কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতেই আজ এ বিষয়ে সম্মত হয় ইইউভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো। মূলত, ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণই দেশগুলোর এ সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ।
নতুন এ চুক্তি অনুযায়ী ইইউ রাশিয়া থেকে পুরোপুরিভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধ করবে এবং একইসঙ্গে ধাপে ধাপে তেল আনার প্রক্রিয়াও বন্ধ করা হবে। এর ভিত্তিতে ২০২৬ সালের শেষে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে পাইপলাইন গ্যাস আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট আর্সেলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আজ আমরা এ ধরনের আমদানি পুরোপুরিভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশসহ জ্বালানিক্ষেত্রে নতুন অংশীদারিত্ব ও সম্ভাবনা খুঁজতে উদ্যোগী হবো।’
এক্ষেত্রে, চলতি বছরের ১৭ জুনের আগে শেষ হয়ে যাওয়া স্বল্পমেয়াদি চুক্তির ক্ষেত্রে আগামী ২০২৬ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে এলএনজি এবং ২০২৬ সালের ১৭ জুন থেকে পাইপলাইন গ্যাস আমদানি পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
একইসঙ্গে, চলতি বছরের ১৭ জুনের আগে শেষ হয়ে যাওয়া দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির ক্ষেত্রে এলএনজি ও পাইপলাইনের গ্যাস আমদানি বন্ধ হবে যথাক্রমে ২০২৭ সালের শুরু এবং ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে।

এ সময়ের মধ্যে ইইউভুক্ত কোনো দেশের পক্ষে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুদ করা সম্ভব না হলে ওইসব দেশের জন্য এ চুক্তির মেয়াদ এক মাস পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
তবে, আগামী ২০২৭ সালের শেষে ইউরোপীয় কমিশন রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বাকি প্রক্রিয়াও শেষ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের শুরুতেই এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করা হবে।
এদিকে, আজকের নতুন এ চুক্তি অনুযায়ী ইইউভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো আগামী বছরের ১ মার্চের মধ্যে জাতীয়ভাবে তেল-গ্যাস সরবরাহ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা কমিশনের কাছে তুলে ধরবে।
একইসঙ্গে, দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে আরও চুক্তি করবে, না দেশটির উপর আরোপিত এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নেবে - কমিশনকে এ সিদ্ধান্তও জানাবে । দেশগুলোর অবস্থান ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তীতে কমিশন একটি প্রস্তাবনা জারি করবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার আগে ইইউভুক্ত দেশগুলো রাশিয়া থেকে মোট জ্বালানির ৪৫ শতাংশ আমদানি করতো। কিন্তু, চলতি বছরের অক্টোবরে এ পরিমাণ কমে ১২ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানে শুধু হাঙ্গেরি, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম পুরোদমে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করছে।
অন্যদিকে, ইউরোপের দেশগুলো পাইপলাইন গ্যাস আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এখনও পর্যন্তও রাশিয়াই এ দেশগুলোর অন্যতম প্রধান এলএনজি সরবরাহকারী। কারণ, ২০২৪ সালে দেশগুলো মোট জ্বালানির ২০ শতাংশই আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে, যার মোট পরিমাণ ২০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার।
এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া ইইউভুক্ত দেশগুলোয় জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আমদানিকার দেশে পরিণত হয়েছে। এ তালিকায় প্রথমে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশ জ্বালানি আমদানি করে।
প্রতি বছর ইইউভুক্ত দেশগুলোর জ্বালানির চাহিদা প্রায় ১০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার।
সূত্র : সিএনএন, আল-জাজিরা।



