ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ : বৈশ্বিক তেলের বাজারে সর্বোচ্চ দরপতন
অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৭, ২৪ জুন ২০২৫

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করার আগে শেষ লেনদেনে তেলের বাজারে এ পরিমাণ দরপতন হয়েছিলো।
বিশ্ববাজারে আজ মঙ্গলবার তেলের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের আগে একবার তেলের বাজারে এ পরিমাণ দরপতন দেখা গিয়েছিলো। তবে, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর দাম আবার বাড়তে পারে বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
বৈশ্বিক তেলের বাজারের প্রধান পণ্য ব্রেন ক্রডের দাম আজ ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ দশমিক ২৪ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক ব্যবহৃত তেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রডের দাম ৪ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬৫ দশমিক ৪১ ডলারে।
মূলত, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করার আগে শেষ লেনদেনে তেলের বাজারে এ পরিমাণ দরপতন হয়েছিলো।
এদিকে, ইসরায়েলের ওই হামলার পর পরবর্তী ১২ দিন ধরে উভয় দেশ ব্যাপকভাবে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের মিত্র দেশ হিসেবে এ যুদ্ধে ইরানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ অবস্থায় গতকাল সোমবার দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু, এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান এর শর্ত ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করে ইসরায়েল।
একইসঙ্গে, এর প্রতিবাদে আবারও তেহরানে নতুন করে হামলা চালানোর অঙ্গীকার করে দেশটি। কিন্তু, শর্ত ভঙ্গের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারে সাময়িক স্বস্তি দেখা গেলেও এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বৈশ্বিক অনলাইন আর্থিক ও বিনিয়োগ সংস্থা এফএক্সটিএমের জেষ্ঠ্য বাজার বিশ্লেষক লুকম্যান ওটুনুগা এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা বাজারে সাময়িক স্বস্তি নিয়ে এসেছে, কিন্তু এ অবস্থা খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আবার যদি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় বা যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করা হয় তাহলে বাজারে অবশ্যই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে স্বর্ণ ও শেয়ার বাজারে।’
এদিকে, যুদ্ধবিরতির কারণে তেল সরবরাহে কোনো সমস্যা দেখা দিবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকী দিলে তেলের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশনের হিসাব অনুযায়ী এ প্রণালী দিয়ে বৈশ্বিক তেলের মোট এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ করা হয়।
এ ক্ষেত্রে তা ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৃহৎ আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস।
তবে, যুদ্ধবিরতির পর এখনও নতুন করে কোনো হামলা শুরু না হওয়ায় তেলের বাজারে স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে, তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নরওয়েভিত্তি কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান ইসটাড এনার্জির কমোডিটি মার্কেট শাখার বৈশ্বিক প্রধান মুকেশ শাহদেব আজ এ বিষয়ে বলেন, ‘হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নামতে পারে। এ বিষয়টিই হয়তো দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে সাহায্য করেছে; যদি সত্যিই তা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।’
উল্লেখ্য, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর গত সপ্তাহে তেলের দাম বিগত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। সে সময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের উল্লাস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু, ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে তেলের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ ক্ষেত্রে আজ দিনশেষে মার্কিন ক্রড তেলের দাম ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ দশমিক ৫১ ডলারে বিক্রি হয়েছে। গত এপ্রিলের পর এটিই এ পণ্যের সর্বোচ্চ দরপতন। এ বিবেচনায় গত তিন বছরের মধ্যে আজ পণ্যটির জন্য ছিলো সবচেয়ে খারাপ দিন।
অন্যদিকে, ব্রেন্ট ক্রড আজ দিনশেষে বিক্রি হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৭১ দশমিক ৪৮ ডলারে। এর মধ্য দিয়ে এ তেলের ৭ দশমিক ২ শতাংশ দরপতন হলো, যা ২০২২ সালের অগাস্টের পর সর্বোচ্চ।
সূত্র : সিএনএন।