রাজনীতি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পোপ রূপে ট্রাম্প : সমালোচনার ঝড়

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৪ মে ২০২৫;  আপডেট: ২২:৩৩, ৪ মে ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পোপ রূপে ট্রাম্প : সমালোচনার ঝড়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা ট্রাম্পের সেই ছবি।

এবার পোপের সাজে হাজির হয়ে সমালোচনার মুখে পড়লেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি করা ট্রাম্পের এ ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার এ ধরনের কাজে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ক্যাথলিকসহ অন্যান্য খ্রিস্টানদের মধ্যে। 

এমন এক সময় তিনি এ কাজ করলেন, যখন খুব শিগগিরই ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু হিসেবে নতুন পোপের নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছে ভ্যাটিকান সিটি। 

গত শুক্রবার রাতে তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে এ ছবি প্রকাশ করেন  ট্রাম্প। পরবর্তীতে, হোয়াইট হাউস থেকে তার অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট এক্সে এটি আবার প্রকাশ করা হয়। ট্রাম্প ক্যাথলিক খ্রিস্টান নন এবং তিনি নিয়মিত চার্চেও যান না। 

তবে, গত মাসে ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বার্ধক্যজনিকত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে ইতালির ভ্যাটিকান সিটিতে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ঘটনার এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এ ছবি প্রকাশ করলেন তিনি। 

প্রকাশিত ছবিতে ভাবগম্ভীর ট্রাম্পকে রাজকীয় এক চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তার পরনে ছিলো পোপের পোশাক ও মাথায় মুকুট। ছবিতে তাকে ডান হাতের তর্জনী উঁচু করে রাখতে দেখা যায়। 

চলতি সপ্তাহেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মজা করে নিজের পোপ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি পোপ হতে চাই। এটি আমার প্রথম পছন্দ।' 

এ সময় পরবর্তী পোপ হিসেবে তার পছন্দের উত্তরে বলেন যে, ব্যক্তিগতভাবে তার তেমন কাউকে পছন্দ না হলেও নিউইয়র্কের এক কার্ডিনাল ‘অনেক ভালো’। এ সময় তিনি নিউইয়র্কের আর্চবিশপ টিমোথি ডোনালের কথাই উল্লেখ করেছেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। কট্টরপন্থী ডোনাল গর্ভপাতবিরোধী বলে জানা যায়। 

তবে, ট্রাম্পের প্রকাশিত পোপের এআই ইমেজের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কার্ডিনাল ডোনাল। কিন্তু, এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের ক্ষমা চাওয়া উচিত কিনা, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। 

এদিকে, ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে সমালোচনার ঝড় উঠে। খোদ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করা হয়। ট্রাম্পবিরোধী রিপাবলিকানদের এ দলটি থেকে এ কাজের মাধ্যমে ‘ক্যাথলিকদেরকে অপমান করা ও তাদের বিশ্বাস আঘাত হানা হয়েছে’ বলে প্রতিবাদ করা হয়। 

নিউইয়র্কের ক্যাথলিক কনফারেন্স থেকেও ট্রাম্পের এ কাজের সমালোচনা করা হয়। এ বিষয়ে তারা বলেন, ‘এ ছবিতে বুদ্ধিদীপ্ত বা মজার কোনো কিছু নেই মাননীয় প্রেসিডেন্ট। আমরা কিছুদিন আগেই আমাদের প্রিয় পোপ ফ্রান্সিকে সমাহিত করেছি এবং সামনে নতুন একজনকে এ দায়িত্বে নিয়োজিত করতে যাচ্ছি। আমাদের নিয়ে মশকরা করবেন না।’ 

তবে, ভ্যাটিকানের মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন। এদিকে, ছবিটি নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, ‘পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট ইতালিতে গিয়েছিলেন এবং তিনি বরাবরই ক্যাথলিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান সমর্থক।’ 

তবে, সর্বজননন্দিত পোপ ফ্রান্সিস বরাবরই ট্রাম্পের বিভিন্ন কাজে দুঃখ প্রকাশ করতেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পোপ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নিমার্ণের বিরোধিতা করেন। 

এ বিষয়ে সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘সে যেই হোক না কেন, সে যদি মানুষের মধ্যে সেতু তৈরি না করে শুধু দেয়াল নির্মাণ করতে চায়, তাহলে সে প্রকৃত খ্রিস্টান নয়।’ 

উল্লেখ্য, চার্চের কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে আগামী ৭ মে একত্রিত হয়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পরবর্তী পোপ নির্বাচন করবেন। 

সূত্র : আল-জাজিরা।