চাঁদে পরমাণু শক্তিকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চীন ও রাশিয়ার
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৭ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:১৭, ২৮ মে ২০২৫

নানামুখী মহাকাশ গবেষণা ও চন্দ্র অভিযানের মধ্য দিয়ে চীন ক্রমেই এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে।
চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে পরমাণু শক্তিকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। চাঁদে স্থায়ীভাবে নির্মিতব্য একটি গবেষণাগারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিতে এ পরিকল্পনা করেছে দেশ দুটি।
আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণাগার (দ্য ইন্টারন্যাশনাল লুনার রিসার্চ স্টেশন বা আইএলআরএস) নামের ওই গবেষাণাগারটিই মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজের জন্য এই শক্তিকেন্দ্রের উপর নির্ভর করবে।
চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে রাশিয়া ও চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা যথাক্রমে রসকম ও চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ)। এ দেশ দুটি ছাড়াও এ প্রকল্পে আরও ডজনের বেশি আন্তর্জাতিক অংশীদার যুক্ত হয়েছে।
এদিকে, এ উদ্যোগকে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টিমিস প্রকল্পের প্রতিদ্বন্ধী প্রকল্প বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর্টিমিস প্রকল্পের আওতায় চাঁদের কক্ষপথে একটি চন্দ্র গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নাসা। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ‘গেইটওয়ে’ নামের এ চন্দ্র গবেষণাকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে।
এ প্রকল্পে নাসা ছাড়াও আরও ৫৫টি দেশের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপিয় ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোও অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে, চীন ও রাশিয়ার আইএলআরএস প্রকল্পের আওতায় চাঁদে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার নির্মাণ করা হবে। এটির অবস্থান হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এ গবেষণাগারটি থেকে দীর্ঘমেয়াদী স্বয়ংক্রিয় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এছাড়া, গবেষণাগারটিতে স্বল্পমেয়াদে নভোচারীও পাঠানো হবে।
এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে রসকম জানায়, ‘গবেষণাগারটিতে মৌলিক মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এবং একইসঙ্গে আইএলআরএসে দীর্ঘমেয়াদে কোনো স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব কিনা, সে সম্পর্কিত প্রযুক্তির পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে। মূলত, চাঁদে মানুষের উপস্থিতির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে এসব গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
এদিকে, ২০১৭ সালে প্রথম এ প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত পাকিস্তানসহ ভেনেজুয়েলা, বেলারুশ, আজারবাইজান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, নিকারাগুয়া, থাইল্যান্ড, সার্বিয়া, সেনেগাল ও কাজাখস্তান এতে যুক্ত হয়েছে।
এছাড়া, চীন আরও ৫০টি দেশ, ৫০০ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা এবং ৫ হাজার বিদেশি গবেষককে এ প্রকল্পে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাবে। এ প্রকল্পের প্রধান গবেষক গত বছর এ তথ্য জানান।
একইসঙ্গে, চীনের এ আইএলআরএস প্রকল্পটি মূলত দেশটির ‘৫৫৫ প্রকল্প’-এর অন্তর্ভুক্ত বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকেই চীন চাঁদে বিভিন্ন রোবটচালিত যন্ত্রযান পাঠিয়ে আসছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি এখন পর্যন্ত চাঁদের অন্ধকার অংশের মানচিত্র তৈরি করাসহ ২০২৪ সালে প্রথম কোনো দেশ হিসেবে উপগ্রহটি থেকে পাথর সংগ্রহ করে আনে।
আর, বর্তমান আইএলআরএস প্রকল্পের আওতায় চীন এবার প্রথমবারের মতো চাঁদে নভোচারী পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর অংশ হিসেবে ২০২৮ সালে গবেষণাগার স্থাপনের প্রথম মিশনটি পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।