গবেষণা প্রতিবেদন
অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৯, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ০২:২০, ৩০ মে ২০২৫

অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে ডোনাট, সিরিয়ালস, হিমায়িত ও মিষ্টিজাত খাবার, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এবং কোমল পানীয়। ছবি : ইন্টারনেট।
খাদ্য তালিকায় যতো বেশি অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার যোগ করা হবে, একজন মানুষের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ততোই বাড়বে। ২ লাখ ৪০ হাজার ব্যক্তির উপর সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিন এ গত সোমবার নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহগবেষক কার্লোস অগুস্তো মন্তেইরো এ বিষয়ে বলেন, ‘৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি যারা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খায়, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণায় আমরা এটা দেখতে পেয়েছি যে, খাদ্য তালিকায় অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়লে তা মৃত্যু ঝুঁকি ৩ শতাংশ বাড়ায়।’
অধ্যাপক কার্লোস ‘অতি প্রক্রিয়াজাত’ শব্দটি উদ্ভাবন করেছেন। মূলত, ২০০৯ সালে খাবারের প্রকারভেদের সুবিধার্থে তিনি ‘নোভা’ নামের একটি ব্যবস্থা দাঁড় করান, যেখানে খাবারকে এর প্রক্রিয়াজাত করার মাত্রা অনুযায়ী চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেখানেই প্রথম তিনি ‘অতি প্রক্রিয়াজাত’ বিশেষণটি যোগ করেন।
এ প্রকারভেদের প্রথমেই রয়েছে অপ্রক্রিয়াজাত বা সামান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার, যাতে এর প্রাকৃতিক গুণাগুণ বজায় থাকে, যেমন - ফল, শাক-সবজি, মাংস, দুধ ও ডিম। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে লবণ, মসলা এবং তেলের মতো রান্নায় ব্যবহার করা হয়, এমন উপাদান। আর, তৃতীয় অংশে রয়েছে টিনজাত পণ্য ও হিমায়িত সবজির মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এতে মূলত প্রথম দুই প্রকারভেদের উপকরণে তৈরি খাবার অন্তুর্ভুক্ত থাকে।
আর, চতুর্থ অংশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারকে। অধ্যাপক কার্লোসের মতে, এ ধরনের খাবারে খুব সামান্য পরিমাণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো প্রকার প্রকৃত খাদ্য উপাদান থাকে না বললেই চলে। বরং, নিম্নমানের বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে এসব খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হয় এবং প্রায়ই এগুলোতে এমন কৃত্রিম স্বাদবর্ধক দেওয়া হয় যাতে তা খাওয়ারযোগ্য ও মুখরোচক হয় এবং মানুষের মধ্যে একটি নেশার মতো অভ্যাস তৈরি করে।
২০২৪ সালে দ্য বিএমজে জার্নালের সম্পাদকীয়ের সহলেখক হিসেবে কার্লোস এ বিষয়ে বলেন, ‘মানুষের শরীর এ ধরনের খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিবে, এটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। শরীর এসব খাবারকে অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর হিসেবে এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থাৎ, ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে থাকে।’
এদিকে, এ গবেষণায় এটাও দেখানো হয়েছে যে - কম, বেশি ও উচ্চমাত্রায় অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের মধ্য দিয়ে কিভাবে মৃত্যু ঝুঁকির তারতম্য হয়। আটটি দেশে এ বিষয়ক একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
এক বিবৃতিতে এ গবেষণার প্রধান গবেষক এদোয়ার্দো অগুস্তো ফার্নান্দেজ নিলসন বলেন, ‘যেসব দেশে এ ধরনের অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কম মাত্রায় গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৪ শতাংশ। বিপরীতে, যেসব দেশে অতি মাত্রায় এ ধরনের খাবার খাওয়া হয়েছে সেখানে এ হার ১৪ শতাংশ।’
তবে, এসব মৃত্যু অতি মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের কারণেই হয়েছে না এর সঙ্গে আরও কোনো কারণ জড়িত ছিলো, গবেষণা থেকে সে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, এ গবেষণার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ অর্থাৎ প্রায় ৫৫ শতাংশ অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে, এসব খাবার গ্রহণের পরিমাণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হলে ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৪ হাজার অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো বলে গবেষণাটিতে দাবি করা হয়।
অন্যদিকে, কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের মতো দেশে এ ধরনের খাবার গ্রহণের হার যথাক্রমে ১৫ ও ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এসব দেশে এ ধরনের খাবার গ্রহণের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হলে ২০১৫ সালে প্রায় ৩ হাজার ও ২০১৭ সালে ২৫ হাজার অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, এ সবই তাত্ত্বিক হিসাব এবং খাবারের তালিকা থেকে কখনো অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন বিজ্ঞানিরা। তাদের মতে, এটি খুবই অবাস্তব এবং বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব। ফলে, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকির সঠিক হিসেব প্রকৃতপক্ষে কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়।
তবে, তা সত্ত্বেও শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে এ ধরনের খাবার গ্রহণের একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় কেমব্রিজের পরিসংখ্যানবিদ স্টেফান বার্জেস। তাঁর মতে, আগে থেকেই স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এ ধরনের খাবার গ্রহণের একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং এটি অবশ্যই দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিভেদে ভিন্ন।
সূত্র : সিএনএন।