হংকংয়ের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন : এ পর্যন্ত নিহত কমপক্ষে ৩৬
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৬ নভেম্বর ২০২৫; আপডেট: ০১:০৭, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
ওয়াং ফুক কোর্ট নামের এ হাউজিং কমপ্লেক্সটি শহরের আটটি ব্লক নিয়ে গঠিত।
হংকংয়ের একটি আবাসিক এলাকার বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনও আরও প্রায় ২৭৯ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছে।
বর্তমানে আরও ২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এবং এদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে শহরের মেয়র জন লি জানিয়েছেন।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের সবাই আগুন লাগা ভবনগুলোতে আটকে আছেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। তবে, উদ্ধার তৎপরতা ও আগুন নিভোনোর কাজ চলমান থাকার সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এক বৃদ্ধা ও একটি শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
হংকংয়ের উত্তর-পূর্বাংশের তাই- পো জেলার ওই আবাসিক ভবন এলাকায় বর্তমানে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। ওয়াং ফুক কোর্ট নামের এ হাউজিং কমপ্লেক্সটি শহরের আটটি ব্লক নিয়ে গঠিত।
আজ স্থানীয় সময় রাত সোয়া আটটায় ফায়ার সার্ভিস বিভাগ থেকে বলা হয়, ‘অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থল থেকেই ২৮টি মরদেহ উদ্ধার করে, যারা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আরও ৬ জনকে সংকাটপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং পরবর্তীতে এদের মধ্যে আরও ৪ জন মারা যায়।’
এদিকে, নিহতদের মধ্যে একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মী রয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। সরকারের তরফ থেকে নিহত এ কর্মীর প্রতি শোক জানানো হয়েছে।
অগ্নিনির্বাপক বিভাগ স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৫১ মিনিটে প্রথম আবাসিক ভবন এলাকায় আগুন লাগার সংবাদ পায়। আগুনের বিস্তার অনুযায়ী স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৩৪ মিনিটে তারা ঘটনাস্থলকে ৪ নাম্বার অ্যালার্মে উন্নীত করে।
কিন্তু, রাত নেমে আসার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় অগ্নিনির্বাপক বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৫ নাম্বার অ্যালার্ম ঘোষণা করা হয়। এখনও পর্যন্ত একে হংকংয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা বলা হচ্ছে। বর্তমানে ৮০০ এরও বেশি অগ্নিনির্বাপক কর্মী ঘটনাস্থলে কাজ করছেন বলে মেয়র জানান।

বর্তমানে ঘটনাস্থলে ১২৮টি আগুন নেভানোর ট্রাক ও ৫৭টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক বিভাগের উপ-পরিচালক ডেরেক আর্মস্ট্রং চ্যাং বলেন, ‘আগুন লাগা ভবনগুলো থেকে বিভিন্ন কাঠামো খুলে নিচে পড়ছে। বর্তমানে ভবনগুলোর ভেতরের তাপমাত্রা বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে, আমাদের কর্মীদের পক্ষে ভবনের ভেতরে গিয়ে আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
এর আগে ৩১-তলা বিশিষ্ট এক একটি ভবনে অসংখ্য বাসিন্দা আটকা রয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়। তবে, এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ কমপ্লেক্সের প্রায় দুই হাজারের মতো আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে আটকে পড়াদের মধ্যে অধিকাংশই বয়স্ক ব্যক্তি বলে স্থানীয় গণমাধ্যম টিভিবিকে তাইপো জেলার কাউন্সিল সদস্য লু হাইইউ-ফাং জানিয়েছিলেন। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এখনও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে, আগুন লাগা ভবনগুলোতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ চলছিলো বলে টিভিবি জানিয়েছে। আগুন লাগার পর বর্তমানে এসব ভবনে সংস্কার কাজের জন্য লাগিয়ে রাখা বড় বাঁশ এবং ঝুলিয়ে রাখা পাটের চট খসে পড়ছে।
একইসঙ্গে, ভবনগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া বের হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও থেকে দেখা গেছে। রাত নামার পর ভবনের বেশ অনেকগুলো ফ্লোরে ভয়াবহ আগুন জ্বলতে থাকার দৃশ্য স্পষ্ট হয়েছে।
এ অবস্থায় দরজা-জানালা বন্ধ করে আশেপাশের ভবনের বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, দুর্যোগপূর্ণ এ পরিস্থিতেতে বাসিন্দাদের শান্ত থাকারও অনুরোধ জানায় অগ্নিনির্বাপক বিভাগ। বর্তমানে আগুন নেভানোর কাজ নির্বিঘ্ন করতে প্বার্শবর্তী মহাসড়কের কিছু অংশ বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হংকংয়ের উত্তরাংশের জেলা তাই-পো মূলত একটি মফস্বল এলাকা। এটি চীনের শেনঝেন শহরের সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।



