পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : পাল্টা জবাব পাকিস্তানের
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৭ মে ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩৪, ৭ মে ২০২৫

ভারত-পাকিস্তানের এ পাল্টাপাল্টি হামলা দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকালে এ হামলা চালায় দেশটি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এ হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
একইসঙ্গে, এ হামলাকে ‘যুদ্ধ শুরুর শামিল’ বলে অ্যাখ্যা দিয়ে এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে পাকিস্তান। এর পর পরই ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মীর সীমান্ত লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায় দেশটি।
পাকিস্তানি এ হামলায় ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মীরে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে ভারতের তরফ থেকে দাবি করা হয়।
এদিকে, মূলত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে ভারত। তবে, এতে বেশ কিছু মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
অন্যদিকে, বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৫টি যুদ্ধ বিমান ভূ-পতিত করা হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হলেও ভারতের তরফ থেকে এখনও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
এ অবস্থায় ভারত এ অঞ্চলে সর্বাত্মক হামলা চালালে তা পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিবে বলে সতর্ক করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেন, 'ভারত যদি এ অঞ্চলকে পরমাণু যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায় তাহলে দেশটিকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।'
তবে, ভারত-পাকিস্তানের এ দ্বন্ধের খুব শিগগিরই একটি সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে, উভয় পক্ষকেই সংযত আচরণ করার এবং কোনো ধরনের সেনা হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে, বর্তমানে দেশ দুটির এ হামলা-পাল্টা হামলার কারণে এ অঞ্চলের বিমান চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মূলত, গত ২২ এপ্রিল ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় যাদের প্রায় সবাই ভারতীয় নাগরিক। এ ঘটনার পর এর সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ করে ভারত।
অন্যদিকে, এ হামলার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে পাকিস্তান। একইসঙ্গে, ভারতের এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও এর স্বপক্ষে তাদের হাতে জোরোলো কোনো প্রমাণ নেই বলে দাবি করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
কিন্তু, এ ঘটনার পর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে, পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ উভয় দেশই চলতি সপ্তাহ থেকে সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও অস্ত্রের মহড়া শুরু করে। এর ফলাফল হিসেবেই আজ দেশ দুটির কাশ্মীর সীমান্তে পাল্টাপাল্টি এ হামলার ঘটনা ঘটলো।
তবে, আজকের এ 'বেপরোয়া' ও 'কাণ্ডজ্ঞানহীন' হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
আজ ইসলামাবাদে বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে এ দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান - উভয়ই কাশ্মীরের দুটি আলাদা অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু, উভয় দেশই এর পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। আর, এ দাবির ভিত্তিতে এর আগে আরও তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তান।
আরও কিছু ছবিতে ভারত-পাকিস্তান বর্তমান পরিস্থিতি :
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরা।