ইরানের বন্দরে বিস্ফোরণ : বেড়েছে নিহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২২:১৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

বিস্ফোরণের কারণে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ায় বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বন্দরে সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনার মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ রবিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা এ তথ্য জানায়। এ ঘটনায় আরও ৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থাটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট আগুন নেভাতে দমকল কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে, আজ রবিবার পর্যন্ত ৮০ শতাংশ আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনির বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ তথ্য জানায়।
তবে, আজ থেকে বন্দরটির কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, বিস্ফোরণটি অনেক শক্তিশালী হওয়ায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও এর শব্দ শোনা গেছে। এ সময় বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট কস্পনে বন্দরের আশেপাশের অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম এ তথ্য জানায়।
এছাড়া, শনিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় বিস্ফোরণের সময় স্বাভাবিকভাবেই বন্দরটিতে অনেক লোকসমাগম ছিলো। ফলে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়েছে বলে জানানো হয়।
এদিকে, বিস্ফোরণের কারণে বন্দরে থাকা অ্যামোনিয়া, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের মতো রাসায়নিক বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে, আশেপাশের বেশ কয়েক কিলোমিটারের বাতাসে দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে।
ফলে, আজ বন্দরের পার্শ্ববর্তী প্রাদেশিক রাজধানী বান্দার আব্বাসে অবস্থিত সব স্কুল ও অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে তাসনিম বার্তা সংস্থা জানায়।
একইসঙ্গে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাসিন্দাদের ঘর থাকার অনুরোধ জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বিস্ফোরণের মূল কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে, বন্দরে মজুদ করে রাখা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের কারণেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রধানমন্ত্রী মাসুদ পেযেস্কিয়ান।
এদিকে, বন্দরে মূলত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক মজুদ করে রাখা হয়েছিলো বলে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে, বিস্ফারণের স্থানে কোনো সেনাযান ছিলো না বলে নিশ্চিত করেছে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ এ বিষয়টি নিশ্চিত করে মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান যে, এ বন্দর মধ্য দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করার অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’।
তবে, জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলি ফতুল্লাহ-নিজাদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ বিবৃতির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
বিষয়টি আদতে এমন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন এক রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যে রাসায়নিক মূলত ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য চীন থেকে ইরানে আমদানি করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ইরানের হোরমোযগান প্রদেশে অবস্থিত দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বন্দরে গতকাল শনিবার বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। বন্দরটি রাজধানী তেহরান থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
ইরানের মোট বাণিজ্যের অর্ধেকই এ বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। অর্থাৎ, আমদানি-রফতানি করা কন্টেইনারের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই এ বন্দরের মধ্য দিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করে ও বের হয়ে যায়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।