অন্যান্য

স্পেন ও পর্তুগালে বড় আকারের বিদ্যুৎ বিপর্যয়

ফ্রান্সের কিছু অংশেও প্রভাব

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৮ এপ্রিল ২০২৫;  আপডেট: ০১:২০, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

স্পেন ও পর্তুগালে বড় আকারের বিদ্যুৎ বিপর্যয়

স্পেনের মাদ্রিদে ট্রাফিক বাতিগুলো অচল হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

স্পেন ও পর্তুগালে বড় আকারের বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের দক্ষিণপশ্চিমের কিছু অংশেও এর প্রভাব পড়েছে। আজ সোমবার দেশগুলোতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এ ঘটনা ঘটে।  এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্পেন।

পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে গণপরিবহনগুলো অচল হয়ে সড়কে প্রচণ্ড যানজট দেখা দিয়েছে। উড়োজাহাজের ফ্লাইট বাতিল এবং এটিএম বুথগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষজন।

বিদ্যুৎ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও গ্রিড সচল করতে না পারায় এ ভোগান্তি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। তবে, কোনো ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্তোনিও কস্তা। 

কিন্তু, প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে স্পেনে আবহাওয়াজনিত এক বিরল ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটিই স্পেন ও পর্তুগালের আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মূল কারণ। পর্তুগালের প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরইএন এ তথ্য জানায়।

ইউরোপের দক্ষিণপশ্চিমাংশের অনেক বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে এই আইবেরিয়ান পেনিনসুলা গঠিত। তবে, এটি স্পেনের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ফ্রান্সের কিছু অংশেও প্রভাব ফেলেছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে, এ ঘটনায় এরইমধ্যে সংসদে জরুরি বৈঠক করেছে স্পেন ও পর্তুগালের সরকার। কিন্তু, স্পেনের বিদ্যুৎ গ্রিড সচল করতে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। দেশটির গ্রিড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরইই এর প্রধান পরিচালক এদোয়ার্দো প্রিয়েতো আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। 

এ অবস্থায় যানজট এড়াতে বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্পেন সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজেসের কার্যালয় থেকে বলা হয়, ‘এ ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

এদিকে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ট্রাফিক লাইটগুলো অচল হয়ে পড়েছে। অনেক যাত্রীই মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহন ও লিফটে আটকে পড়েছে বলে দেশটির একটি রেডিও স্টেশন জানায়। 

মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় মাদ্রিদের বাস স্টপগুলোতে দেখা দেয় মানুষের দীর্ঘ সারি।

ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্পেনের এক বাসিন্দা কার্লোস কনদোরি বলেন, ‘ফোনে কোনো নেটওয়ার্ক নেই, আমি আমারা পরিবার, মা-বাবা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না : আমি এমনকি আজ কাজেও যেতে পারিনি। সবাই খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে, কারণ স্পেনে এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।’ 

এদিকে, ট্রাফিক লাইটগুলো অচল হয়ে যাওয়ায় শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যস্ত সড়কে যানবাহন সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। 

পর্তুগালেও ট্রাফিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে বলে দেশটির পুলিশ জানায়। একইসঙ্গে, লিসবন ও পর্তো শহরে মেট্রোরেল ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলেও জানানো হয়। 

তবে, ইউরোপের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে পর্তুগালের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরইএন জানায়। একইসঙ্গে, এ সমস্যার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়। 

কিন্তু, দেশটিতে সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে এক সপ্তাহের মতো সময় লেগে যেতে পারে বলে পরবর্তীতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়। 

এদিকে, ফ্রান্সে অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেও খুব দ্রুতই তা আবার সচল করা সম্ভব হয়েছে। দেশটির গ্রিড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরটিই এ তথ্য জানায়। বর্তমানে এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। 

একইসঙ্গে, আরটিই থেকে স্পেনের বিদ্যুৎ গ্রিড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা হচ্ছে এবং তাদের মাধ্যমে এরইমধ্যে দেশটিকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে বলে আরটিই জানায়। 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্পেনের কাতালোনিয়া, অ্যারাগন, বস্কো কাউন্টি ও আন্দালুসিয়াসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে বলে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। 

তবে, মধ্যম ও দূর পাল্লার ট্রেন যোগাযোগ আগামীকালের আগে চালু করা সম্ভব হবে না বলে স্পেনের পরিবহনমন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে জানিয়েছেন। 

স্পেন ও পর্তুগালজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আরও কিছু ছবি : 
স্পেনের বারকোসের একটি সুপারশপে বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় কর্মীরা।স্পেনের একটি রেস্তোরায় মোমের আলোতে খাবার সেরে নিচ্ছেন আগতরা।

পর্তুগালের লিসবনের একটি  মুদি দোকানে মোবাইলের আলোতে কেনাকাটা সারছেন এক ক্রেতা।

চলন্ত সিড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লিসবনের একটি এলাকায় মানুষজনকে সিড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

সূত্র : সিএনএন, আল-জাজিরা।