অন্যান্য

জন্মহার বাড়াতে দুই-সন্তান নীতি বাতিল করলো ভিয়েতনাম

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৫ জুন ২০২৫;  আপডেট: ১৪:০৭, ৫ জুন ২০২৫

জন্মহার বাড়াতে দুই-সন্তান নীতি বাতিল করলো ভিয়েতনাম

দেশটির সরকার দুই-সন্তান নীতি গ্রহণের পর কোনো পরিবার তৃতীয় বা চতুর্থ সন্তান নিলে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো।

ক্রমহ্রাসমান জন্মহার রোধ করতে দুই-সন্তান নীতি থেকে সরে এসেছে ভিয়েতনাম। এ সপ্তাহ থেকেই এ নীতি তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে, এখন থেকে দেশটির দম্পতিরা তাদের যে কয়টি পছন্দ, ততোটি সন্তান নিতে পারবে। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর জানানো হয়েছে।

১৯৮৮ সালে তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার দুই-সন্তান নীতি আরোপ করেছিলো। দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধপরবর্তী সীমাবদ্ধতা, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরের মতো পরিস্থিতিতে ওই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।

দেশটির সরকার দুই-সন্তান নীতি গ্রহণের পর কোনো পরিবার তৃতীয় বা চতুর্থ সন্তান নিলে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো।

দীর্ঘদিন ধরে দুই সন্তানের নীতিতে চলছে দেশটি। বর্তমানে দেশটিতে শিশুজন্মের হার অনেক কমে গেছে এবং এ হার ক্রমেই আরো নিচের দিকে নামছে। এ ছাড়াও, দেশটিতে বয়স্ক বা বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর হারও অনেক বেড়ে গেছে।

হ্যানয় টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাও হং লান-এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার বিদ্যমান এ পরিস্থিতি ভিয়েতনামের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা। এ ছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশটির নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জন্মহার কমতে থাকার পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্যহীনতাও দেখা দিয়েছে।

১৯৯৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভিয়েতনামে শিশুজন্ম হার ছিলো নারীপ্রতি ২ দশমিক ১। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ধরে রাখতে এ হার কিছুটা বাড়ানোর দরকার ছিলো। কিন্তু, বাড়ার বদলে বরং এ হার ক্রমেই কমতে শুরু করে। ২০২৪ সালে এ হার রেকর্ড করা হয় ১ দশমিক ৯১।

কাছাকাছি অবস্থানের দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়েও জন্মহার নিম্নগামী। তবে, ওইসব দেশের অর্থনীতি ভিয়েতনামের তুলনায় বেশ উন্নত। 

মূলত দেশটির শহরাঞ্চলগুলোতে যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, ওইসব স্থানে জন্মের এ হার সবচেয়ে বেশি নিম্নগামী বলে দেখা গেছে।

এ ছাড়া, দেশটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে লিঙ্গগত পার্থক্যও অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছর এ হার ছিলো ১০০টি কন্যাশিশুর বিপরীতে ১১১টি ছেলেশিশু।

লিঙ্গভিত্তিক বা লিঙ্গ-নির্বাচনী গর্ভপাত (সেক্স-সিলেকটিভ অ্যাবোরশন) রোধে চিকিৎসকরা বাবা-মাকে গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ জানাবেন না - দেশটিতে এমন নিয়ম রয়েছে। কিন্তু, এ নিয়ম থাকার পরও তা মানা হচ্ছে না। চিকিৎসকরা সাংকেতিক ভাষায় গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ প্রকাশ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

এসব কারণে দেশটিতে নারী ও পুরুষের তুলনামূলক সংখ্যার মধ্যেও পার্থক্য বাড়ছে। দেশটির জেনারেল স্ট্যাটিস্টিকস অফিস জানিয়েছে, জনসংখ্যার বর্তমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ২০৩৯ সালের মধ্যে ভিয়েতনামে নারীর তুলনায় ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রায় ১৫ লাখ পুরুষ সংখ্যায় বেশি হবে। ২০৫৯ সালের মধ্যে এটি বেড়ে হবে ২৫ লাখ।

সূত্র : আল-জাজিরা।