রাজনীতি

প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের সেনা উপস্থিতি মেনে নিবে না ফিজি

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২ জুলাই ২০২৫;  আপডেট: ২৩:১৯, ২ জুলাই ২০২৫

প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের সেনা উপস্থিতি মেনে নিবে না ফিজি

এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতে চীন ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করায় তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনা উপস্থিতির বিরোধিতা করছে না বলে মন্তব্য করেন রাবুকা।

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের স্থায়ী সেনা উপস্থিতি মেনে নেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেছে ফিজি। আজ বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিটিভেনি রাবুকা এ সতর্কবার্তা জানান। 

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বক্তৃতকালে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা যদি আসতে চায়, তাহলে কে তাদের স্বাগত জানাবে? অবশ্যই ফিজি নয়। আর, আমার মনে হয় চীন বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।’ 

প্রশান্ত মহাসাগীয় এলাকায় বহু বছর ধরেই নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছে চীন। কিন্তু, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর কোনো দেশের আধিপত্য প্রদর্শনের জায়গা নয়, বরং এটি ‘শান্তির সাগর’ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ফিজির প্রধানমন্ত্রী রাবুকা। 

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না পরাশক্তি বা অতি ক্ষমতাবান প্রতিদ্বন্ধিরা প্রশান্ত মহাসাগর দাপিয়ে বেড়াক।’ 

এক্ষেত্রে, চীনের কোস্টগার্ডদের অবশ্যই ফিজির ভূখণ্ড ও সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত বলে মন্তব্য করেন রাবুকা।

তবে, দেশটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীনের অংশগ্রহণ কখনোই অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে এ সময় নিশ্চিত করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সব দেশের নেতারা সবার সঙ্গে শত্রুতা নয় বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি মেনে চলার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন যদিও কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।’ 

এদিকে, ফিজিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, চীন এরইমধ্যে সলোমন দ্বীপ এবং ভানুতুর মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছে। দেশগুলোতে মূলত উন্নত মানের স্টেডিয়াম, সরকারী অফিস, হাসপাতাল এবং রাস্তা নির্মাণে এ ব্যয় করছে দেশটি। 

আর, এর মধ্য দিয়ে দেশটি এরইমধ্যে তাইওয়ানের সঙ্গে দেশগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরাতে সক্ষম হয়েছে। কারণ, কিরিবতি, সলোমন দ্বীপ ও নাইরু এরইমধ্যে তাইওয়ানের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। 

কারণ, তাইওয়ান নিজেদের স্বায়ত্ত্বশাসিত বলে দাবি করে চীনের আধিপত্যের বিরোধীতা করে। কিন্তু, চীন বরাবরই তাইওয়ানকে তার দেশের একটি প্রদেশ হিসেবে গণ্য করে থাকে। 

তবে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে সলোমন দ্বীপ দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ২০২২ সালে দেশটি চীনের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে। 

কিন্তু, এর মধ্য দিয়ে চীন এক সময় এ অঞ্চলে নিজেদের সেনা ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে, এ আশঙ্কার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে চীন। 

এদিকে, শক্তি প্রদর্শনের জন্য চীনের কোনো অঞ্চলে সেনা ঘাঁটি স্থাপনের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন রাবুকা। এ সময় তিনি গত সেপ্টেম্বরে চীনের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করেন। কারণ, সে সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি ফিজির ভূখণ্ডের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায় পড়েছিলো। 

উল্লেখ্য, এ অঞ্চলে কৌশলগত প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে মহাসাগরীয় এলাকা সংক্রান্ত একটি শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফিজির প্রধানমন্ত্রী।

মূলত, বহিরাগতদের এ অঞ্চলের দেশগুলোর একাত্বতার প্রতি সম্মন প্রদর্শন এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনই এ চুক্তি বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য। 

এ ক্ষেত্রে, আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরামের সভায় এর ১৮টি সদস্য রাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। 

সূত্র : ডয়চে ভেলে, আরব নিউজ।