ভারতে ওষুধ তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ড
নিহত বেড়ে কমপক্ষে ৩৯
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩:০১, ১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:০৯, ১ জুলাই ২০২৫

ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা।
ভারতের সিগাজি শিল্পকারখানার এসআইজিসি.এনএস রাসায়নিক কারখানায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৩৯ জনে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে আজ মঙ্গলবার এসব তথ্য জানা গেছে। গত সোমবার কারখানাটিতে সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় আরও প্রায় ৩৪ জন আহত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে আগামী ৯০ দিন যেকোনো ধরনের ওষুধ তৈরির কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার এরইমধ্যে ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এখনও এ দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তেলেঙ্গানা রাজ্যের সাঙ্গারিড্ডি জেলা শহরে দুর্ঘটনাকবলিত কারখানাটি অবস্থিত।
তেলেঙ্গানার অগ্নি-দুর্ঘটনা সম্পর্কিত জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জেভি নারায়ানা রাও বলেন, ‘আমরা এখনও ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছি। এ দুর্ঘটনায় পুরো ভবনটি ধসে পড়েছে।’
এ অবস্থায় এর নিচে আর কোনো মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে কিনা তা ঘটনাস্থল থেকে সব ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার পরই জানা যাবে বলে রাও জানান।
এদিকে, দুর্ঘটনার সময় কারখানাটিতে ১৪০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। এ অবস্থায় এখনও ২৫টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা পি. প্রাভিনয়া জানান।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এ কারখানার এক শ্রমিক চন্দন গোয়ান্ড (৩২) বলেন, ‘আমি বাথরুমে যাওয়ার জন্য কারখানা থেকে বের হয়েছিলাম, তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শব্দটি ছিলো একদম বোমার বিস্ফোরণের শব্দের মতো। এ সময় আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে কারখানাটিতে আগুন জ্বলতে দেখি। আগুন আমার দিকেও ধেঁয়ে আসে। তখন আমি প্রাণ বাঁচাতে দেয়ালের ওপারে ঝাঁপ দেই ও সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’
কারখানাটিতে গত ছয় মাস ধরে কাজ করা শ্রমিক চন্দন আরও বলেন, ‘ভেতরে থাকা অনেকেই এ সময় বের হয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু, এর মধ্যে শ্রমিকদের একটি বড় অংশই ভেতরে আটকা পড়ে ও বের হয়ে আসতে ব্যর্থ হয়।’
সিগাজি মূলত মাইক্রোক্রিস্টালিন সেলুলোজ (এমসিসি) নামের এক ধরনের পাউডার জাতীয় পণ্য তৈরি করে থাকে। বিশেষ জাতের কাঠের গুঁড়া থেকে তৈরি এ দ্রব্যটি খাবার, কসমেটিকস পণ্য এবং বিশেষত রাসায়নিক খাতে বহুল ব্যবহুত। প্রতিষ্ঠানটির এ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত রফতানি করা হয়ে থাকে।
দ্রব্যটির সংকোচন ক্ষমতা, জমাট বাধার বৈশিষ্ট্য এবং ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যকারিতার কারণে ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি অপরিহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও এ দ্রব্যটি প্রক্রিয়াজাত খাবার সতেজ রাখতে, কম ক্যালারিযুক্ত খাবারের মান বজায় রাখতে এবং কসমেটিকস পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে বেশ কার্যকর।
তেলেঙ্গানা শাখাটি সিগাজি শিল্পকারখানার মোট বাৎসরিক ২১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন এমসিসি উৎপাদনের মাত্র এক-চতুর্থাংশ তৈরি করে থাকে।
তারপরও এ অগ্নি দুর্ঘটনার পর আজ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের ৮ শতাংশ দরপতন হয়। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে গত দুই দিনের মধ্যে আজ সর্বাধিক দরপতনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে, তা সত্ত্বেও কারখানার অবকাঠামো ও উপকরণের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় গতকাল কারখানাটি আগামী ৯০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সিগাজি। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটির বীমা সুবিধা থাকায় তারা পুরো ক্ষতিপূরণ দাবি করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারতের দক্ষিণাংশের তামিলনাড়ু রাজ্যের আরেকটি কারখানাতেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সিভাকাসি ম্যানুফাকচারিং কোম্পানির বিস্কুট তৈরির কারখানায় সংঘটিত ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৫ জন নিহত ও আরও ৪ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিনির্বাপক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভারতের বেশ কয়েকটি কারখানায় পর পর আগুন লাগার ঘটনার মধ্যেই আজ আবার এ দুর্ঘটনা ঘটলো।
সূত্র : সিএনএন।