ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২২:১৭, ২১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২২:৩১, ২১ এপ্রিল ২০২৫

পোপের মৃত্যুতে ভ্যাটিকানসহ সারা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। আজ সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি তার বাসভবন ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। পোপের মৃত্যুতে ভ্যাটিকানসহ সারা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান পোপ ফ্রান্সিস বেশ কিছু মাস থেকেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন। নিউমোনিয়ার জটিলতায় গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো।
বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর সুস্থ হয়ে কয়েকদিন আগেই তিনি ভ্যাটিকানে ফিরে আসেন। এমনকি গতকাল রবিবার ইস্টার সানডে উপলক্ষ্যে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণও দেন।
একইসঙ্গে, রবিবার ভ্যাটিকান সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন পোপ।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের বহু দেশের নেতারা। এর মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারত, লেবানন, ইসরায়েল ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের নাম উল্লেখযোগ্য।
এদিকে, ইরান, মিশরসহ বহু মুসলিম বিশ্বের নেতারাও তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন। তাদের মতে, সব ধর্মকেই তিনি শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে সবাইকে একযোগে কাজ করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এছাড়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ দক্ষিণ আমেরিকার বহু দেশের মানুষ ও নেতারাও পোপের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে সাতদিন শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে তার দেশ আর্জেটিনাসহ ব্রাজিল।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরে একটি ছোট স্বাধীন দেশ ভ্যাটিকান সিটিতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ গির্জার প্রধান ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ধর্মীয় নিয়মানুসারে তার মৃত্যুতে একটি দীর্ঘ সময় ধরে শোক পালন করবে ভ্যাটিকান সিটি।
পরবর্তীতে, গির্জার ৮০ বয়সোর্ধ্ব কার্ডিনালদের একটি দল তাদের পরবর্তী ধর্মগুরু নির্বাচন করবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, পোপ ফ্রান্সিস আগে মারিও বারগোগ্লিও নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে রসায়ন শাস্ত্রে পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে তিনি ধর্মশিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে তিনি আর্জেন্টিনার আর্চবিশপের দায়িত্ব নেন।
২০১৩ সালে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তৎকালনী পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদ ছেড়ে দিলে এ দায়িত্ব পান জর্জ মারিও। এ সময় তিনি পোপ ফ্রান্সিস হিসেবে নতুন নামে পরিচিত হন।
রোমান ক্যাথলিক ছাড়া প্রোটেস্ট্যান্ট ও অর্থোডক্সসহ অন্যান্য খ্রিস্টানরা পোপকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। কিন্তু, দায়িত্ব পালনকালে বরাবরই সব ধরনের খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মের মধ্যেও ঐক্যের আহ্বান জানাতেন পোপ ফ্রান্সিস।
এছাড়া, ধর্মযাজকদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ও কানাডার আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। এমনকি সমলিঙ্গের যুগলদের আশীর্বাদ করতে রোমান ক্যাথলিক যাজকদেরও অনুমতি দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
এদিকে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসেন পোপ ফ্রান্সিস। এ সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তিনি।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন র্যানডম হাউস থেকে পোপ ফ্রান্সিসের আত্মজীবনী ‘হোপ’ প্রকাশিত হয়।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরা, প্রথম আলো।