রাজনীতি

সুদানে গৃহযুদ্ধের দুই বছর

দারফুরে হামলায় নিহত ৩০০ : জাতিসংঘ

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১৫ এপ্রিল ২০২৫;  আপডেট: ২২:০৮, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

দারফুরে হামলায় নিহত ৩০০ : জাতিসংঘ

বর্তমানে সুদানের জামজাম এবং আবু সুউক শিবিরে ৭ লাখের মতো মানুষ পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। খাবারের অভাবে শিবিরগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

সুদানের দারফুরে সপ্তাহব্যাপী অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়েছে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)। এতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতিসংঘ এসব তথ্য জানায়। 

গত শুক্র ও শনিবার সুদানের জামজাম এবং আবু সুউক উদ্ধাস্তু শিবির এবং আল- ফাশার শহরের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়। এতে নতুন করে আরও প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দা উদ্ধাস্তু হয়। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা (আইওএম) থেকে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। 

এছাড়া, গতকাল একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালায় আরএসএফ। এতে যুদ্ধকালীন রাজধানী পোর্ট সুদান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

এদিকে, নিহতদের মধ্যে ১০ জন মানবাধিকার কর্মী ছিলেন বলে জাতিসংঘের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। তারা ‘রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সুদান’ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে জামজাম শরণার্থী শিবিরে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। 

শুক্রবারের হামলায় তারা নিহত হন। এ সময় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ধারণ করা ছবিতে ওই এলাকার ঘরবাড়ি ও শিবিরে আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। 

শনিবারের মধ্যে আরএসএফ জামজাম শিবিরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এর আগে সরকারি বাহিনী এবং এর সমর্থিত দল শিবিরটি নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিলো বলে অভিযোগ করে আরএসএফ। এদিকে, তাদের হামলার কারণে ৬০ থেকে ৮০ হাজার পরিবার বা কমপক্ষে ৪ লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয় বলে জাতিসংঘ জানায়। 

তবে, তারা বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের একটি ছোট দলের মধ্যে খাবার, পানি এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়াসহ নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাবার প্রতিজ্ঞা করছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে। 

এদিকে, এমন সময় এসব হামলার ঘটনা ঘটলো, যখন গতকাল দেশটি গৃহযুদ্ধের দুই বছর অতিবাহিত করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদানের এ গৃহযুদ্ধকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবাধিকারের সংকট হিসেবে অ্যাখায়িত করা হচ্ছে।

গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এ বিষয়ে বলেন, ‘দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের পরও সুদানের অবস্থার নূন্যতম কোনো পরিবর্তন হলো না। আর এর চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের নাগরিকদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘অব্যাহত বোমা ও বিমান হামলা শুধু নিহত ও আহতের সংখ্যাই বাড়িয়ে চলেছে। বাজার, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, উপাসনালয় এমনকি উদ্ধাস্তু শিবিরগুলোও হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশের নারী ও কন্যা শিশুদের যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। উভয় পক্ষ থেকেই মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে নিরীহ জনগণকে।’ 

বর্তমানে সুদানের জামজাম এবং আবু সুউক শিবিরে ৭ লাখের মতো মানুষ পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। খাবারের অভাবে শিবিরগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। কারণ, অব্যাহত হামলার কারণে ত্রাণ নিয়ে কর্মীরা সময়মতো শিবিরগুলোতে যেতে পারছে না। 

বর্তমানে সুদানের অর্ধেক জনগণ অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষ তীব্র ক্ষুধার কষ্টে রয়েছে। দেশটির কমপক্ষে ১০টি স্থানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে বলে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এর ফলে আরও প্রায় কয়েক কোটি মানুষ অনাহারে ভুগবে বলে উল্লেখ করা হয়। 

চলমান হত্যাকাণ্ড এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ক্রমাগত একে অপরকে দোষারোপ করে যাচ্ছে এসএএফ ও আরএসএফ।

এ বিষয়ে রিলিফ সুদান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাশিফ শফিক বলেন, ‘দুই বছর ধরে একটি দেশে যুদ্ধ চলছে, এটা অনেক দীর্ঘ একটি সময়। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা অপেক্ষা করি আর একটি করে লাশ মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়।’ 

এ সময় একে ‘বিস্মৃত যুদ্ধ’ উল্লেখ করে বিশ্ববাসীর কাছে সুদানে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সুদানের জন্য নতুন করে ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। একইসঙ্গে, দেশটিতে মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনেরও আয়োজন করে দেশটি।

এদিকে, সুদানের দীর্ঘ এ যুদ্ধ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশটিতে যুদ্ধ বিরতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সম্মেলনে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে, এ সম্মেলনে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় নি বলে অভিযোগ করেছে সুদান সরকার। 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদানে এ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দেশটির সেনা সরকার বা সুদানিজ আর্মড ফোর্স (এসএএফ) এবং আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্ধই ছিলো এ যুদ্ধ শুরুর মূল কারণ। 

দুই বছরের এ যুদ্ধে দেশটিতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। আরও প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে বলে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। 

তবে, এসব হত্যাকাণ্ড এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ক্রমাগত একে অপরকে দোষারোপ করে যাচ্ছে এসএএফ ও আরএসএফ। 

গত মাসে আরএসএফের কাছ থেকে রাজধানী খার্তুম পুনর্দখলে সক্ষম হয় এসএএফ। কিন্তু, বর্তমানে পুরো দারফুর অঞ্চল নিজেদের দখলে রাখা আরএসএফ এ ঘটনার পর দেশটিতে হামলার ঘটনা ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দেয়। এমনকি তারা দেশকে বিভক্ত করে ফেলারও হুমকী দেয়। 

সূত্র :  আল-জাজিরা।