রাজনীতি

তিব্বত ইস্যু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা : চীন

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ১৩ জুলাই ২০২৫;  আপডেট: ০১:৪৭, ১৪ জুলাই ২০২৫

তিব্বত ইস্যু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা : চীন

ভারতের ধর্মশালায় অবস্থিত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মন্দিরে ১৪তম দালাই লামার জন্মদিন অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়।

তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়টি বর্তমানে চীন-ভারত ক‍ূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়া দিল্লিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস থেকে আজ রবিবার এ মন্তব্য করা হয়। 

এদিকে, এমন এক সময় এ মন্তব্য করা হলো যখন খুব শিগগিরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন সফরে যেতে চলেছেন। ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার এ দুই বৃহৎ শক্তিধর দেশের সীমান্তে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এটাই হতে যাচ্ছে ভারতের কোনো মন্ত্রীর প্রথম চীন সফর। 

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক বার্তায় চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইয়ু জিং বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে জিজাং সংক্রান্ত ইস্যুটি চীন-ভারত সম্পর্কের পথের কাঁটা এবং ভারতের জন্য ক্রমেই তা বোঝা হয়ে যাচ্ছে।’ 

চীনারা তিব্বতকে জিজাং নামে অভিহিত করে থাকে। এদিকে, তাঁর বার্তায় নির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে ইয়ু জিং আরও বলেন যে, দালাই লামার নবজীবন প্রাপ্তি সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অসঙ্গতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। 

এ বিষয়ে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘পররাষ্ট্র বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের জিজাংয়ের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুটি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন থাকা প্রয়োজন। কারণ, দালাই লামার নবজীবন প্রাপ্তি ও উত্তরসূরি নির্বাচনের ইস্যুটি সম্পূর্ণভাবে চীনের আভ্যন্তরীণ বিষয়।’ 

চলতি মাসে দালাই লামার ৯০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের অনেক জৈষ্ঠ্য মন্ত্রীই অংশ নেন। তবে, এ অনুষ্ঠানে তাঁর উত্তরসূরি নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই বলে মন্তব্য করেন দালাই লামা। তাঁর এ মন্তব্যে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। 

কারণ, তিব্বতীয়দের বিশ্বাস মতে, যে কোনো বৌদ্ধ ভিক্ষু মৃত্যুর পর আবার পুনর্জন্ম লাভ করে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও নেতাদের অবশ্যই তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচিত করা উচিত বলে দাবি করে চীন। 

এ অবস্থায় এক সপ্তাহ আগে উদযাপিত দালাই লামার ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চীনের এ অভিমতের বিরুদ্ধে দ্বিমত ব্যক্ত করে ভারত। শুধু আধ্যাত্মিক নেতা ও তাঁর কার্যালয়ের হাতেই পুনর্জন্ম বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বলে ওই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন ভারতের সংসদীয় ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। এ সময় তিনি দালাই লামার পাশেই বসে ছিলেন। 

এদিকে, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও ধর্ম বিষয়ে নয়া দিল্লি কোনো প্রকার মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নয় বলে গত ৪ জুলাই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিলো। দালাই লামার জন্মদিনের দুই দিন আগে তাদের এ অবস্থানের কথা জানায় দেশটি। 

তবে, বর্তমান এ পরিস্থিতিতেই আগামী ১৫ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মূলত চীনের উত্তরাঞ্চলের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন আয়োজিত একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্মেলনে অংশ নিবেন তিনি। একইসঙ্গে, এ সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন চীনা নেতার সঙ্গে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও অংশ নিবেন ভারতীয় এ মন্ত্রী। 

২০২০ সালে চীন-ভারত রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনার পর এটিই দেশ দুটির মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের কোনো বৈঠক। ২০২০ সালের ওই ঘটনায় তখন কমপক্ষে ২০ ভারতীয় ও ৪ চীনা সেনা নিহত হয়। 

উল্লেখ্য, তিব্বতে চীনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ১৯৫৯ সাল থেকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন দালাই লামা। তবে, এছাড়াও বর্তমানে দেশটিতে আরও প্রায় ৭০ হাজার তিব্বতীয় বসবাস করছে। 

এদিকে, দালাই লামার রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি ভারত চীনকে নিয়ন্ত্রণের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলে অনেক বিশেষজ্ঞই মন্তব্য করে থাকেন। 

সূত্র : আল-জাজিরা।