স্বদেশ

ভয়াল সেই কালরাত আজ : পালন করা হবে প্রতীকী `ব্ল্যাক-আউট`

স্বদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৫ মার্চ ২০২৪

ভয়াল সেই কালরাত আজ : পালন করা হবে প্রতীকী `ব্ল্যাক-আউট`

`অপারেশন সার্চলাইট` নামে কুখ্যাত এক অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ছবি : সংগৃহীত।

বাঙালির বিভীষিকাময় সেই কালরাত আজ। ১৯৭১ সালের এ রাতেই ইতিহাসের অন্যতম বর্বর গণহত্যা চালায় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা। সেই রাতে ঢাকার পথে নামে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান; তারা নির্মম-নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায় ঘুমন্ত, নিরীহ মানুষের ওপর।

পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালরাতে গণহত্যার শিকার অগণিত শহীদকে স্মরণ করেছেন।

'অপারেশন সার্চলাইট' নামে কুখ্যাত এক অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। বিভীষিকার এ ভয়াল কালরাত স্মরণে ২০১৭ সালে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হয়। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। এরপর থেকে দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বিভীষিকার সেই রাতকে স্মরণ করতে আজ সোমবার দেশব্যাপী এক মিনিট নিরবতা পালনের কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, আজ রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী 'ব্ল্যাক-আউট' পালন করা হবে। এ সময় সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে, কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাকআউটের আওতামুক্ত থাকবে।

একাত্তরের ২৫ মার্চের সকাল থেকে অজানা শঙ্কায় দিন কাটে বাঙালির। সেদিন বেতারের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি কোনো ঘোষণাও প্রচার করা হয়নি। দিনশেষে সবাই যখন ঘুমিয়ে, তখন রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রথম রাস্তায় নেমে আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তারা প্রথমে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, এরপর একে একে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডি, পিলখানা পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সদরদপ্তরসহ সর্বত্র নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। একই সময়ে চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় শহরেও এমন নির্বিচার হত্যা চালানো হয়।

মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকসহ স্বাধীনতার দাবিতে বাঙালির বিক্ষোভে উত্তাল জনপদের খবর সংগ্রহ করতে ঢাকায় আসা বিদেশি সাংবাদিকরা তখনও অবস্থান করছিলেন শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। এ হোটেলের ১২ তলায় দেহরক্ষীদের কড়া পাহারায় ঘুমাচ্ছিলেন পাকিস্তানি পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো। রাত পৌনে ১২টায় পাকিস্তানি সেনারা হোটেল ঘিরে ফেলে কেউ বের হলেই গুলির নির্দেশ দেয়। এভাবেই বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় ঢাকাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলসহ সবখানে পাক সেনাদের বর্বরতার শিকার হন শিক্ষার্থীরা। হত্যা করা হয় ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য ও ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আরো অনেক মনীষী-শিক্ষককে। এভাবে সেই রাতে গোটা ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে।

এ পরিস্থিতিতেও রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বাঙালি ছাত্র-জনতা-পুলিশ। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। পরবর্তী ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা হয় ৩০ লাখ মানুষকে। অবর্ণনীয় বর্বরতার শিকার হন লাখো নারী।

শহীদদের স্মরণে আজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সূত্র : দৈনিক সমকাল ও দৈনিক ইত্তেফাক।