শিক্ষা ও ক্যারিয়ার

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!

টক অব দ্য টাইম রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০:১০, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩;  আপডেট: ২২:২৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!

কেক কেটে অরণি বিদ্যালয়ের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করে শিক্ষার্থীরা।

'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...'। হ্যাঁ, আজ অরণি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ছিলো একটি আনন্দেরই দিন। বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা নাচ-গান-আবৃত্তি আর নাটকের মঞ্চায়নে আনন্দে মুখর একটি দিন কাটিয়েছে।

প্রথাগত ধারণার বাইরে একটু ব্যতিক্রম এ বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে ২০ বছর আগে। ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডিতে ছোট পরিসরে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়টি আজ বহু শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত। বর্তমানে ধানমণ্ডি ৭/এ এবং পশ্চিম ধানমণ্ডির শঙ্করে আরেকটি ক্যাম্পাস নিয়ে পরিচালিত এ বিদ্যালয়টি আজ ৩১ জানুয়ারি উদযাপন করলো তাদের ২০ বছর পূর্তি এবং ২১ বছরে পদার্পণ অনুষ্ঠান। প্রিয় শিক্ষকদের সাথে নিয়ে কেক কেটে এবং বন্ধুদের সাথে পিঠা খেয়ে শিক্ষার্থীরা ভাগাভাগি করে নেয় প্রিয় এ বিদ্যালয়ের জন্মদিনের আনন্দ।

নেচে-গেয়ে দিনটি উদযাপন করেছে অরণির শিক্ষার্থীরা।

দিনভর নাচ-গান-আনন্দ

২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিদ্যালয়টির ধানমণ্ডি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরিচালনায় এবং বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সকাল দশটা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা প্রায় ছয়টা অবধি চলে দুই পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বর্ণিল এ আয়োজনে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিলো গান, নাচ ও কবিতা আবৃত্তিসহ নাটকের মঞ্চায়ন। প্রিয় বিদ্যালয় নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং নানা ভাবনার কথাও তুলে ধরে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

দিনভর ছিলো শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

শিক্ষার্থীদের গান, নাচ, আবৃত্তি আর অভিনয়ে ভরপুর আয়োজনে সবাই উপভোগ করে রবিঠাকুরের 'আমার মা না হয়ে তুমি আর কারো মা হলে', 'বীরপুরুষ' ও 'জুতা আবিষ্কার'; সুকুমার রায়ের 'সৎপাত্র'; কাজী নজরুল ইসলামের 'লিচু চোর'; 'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে', 'একতারা তুই দেশের কথা', 'প্রজাপতি প্রজাপতি', 'যে দেশে শাপলা শালুক', 'হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে', 'দে তোরা আমায় নূতন করে', 'জয় হোক জয় হোক' এবং 'নাও ছাড়িয়া দে'সহ আরো অনেক ছড়া, কবিতা, গান ও নাটক। সাথে ছিলো সবাই মিলে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে স্বদেশকে শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব।

‌‌‌একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল - চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা।

প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌভিক আয়ান এবং আজরিন হায়দার। দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা ও নন্দিতা।

এমন হরেক রকমের আনন্দ আয়োজনেই আজ মুখরিত হয়ে উঠেছিলো অরণি বিদ্যালয়ের ধানমণ্ডি ক্যাম্পাস। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস সাজানো হয় বর্ণিল রূপে।

হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচে রে!

'অনেক আনন্দ করেছি...'

'আজকে এই অনুষ্ঠানে এসে খুব ভালো লেগেছে। আমি কবিতা আবৃত্তি করেছি। আবৃত্তি করেও খুব ভালো লেগেছে। এরকম অনুষ্ঠান আরো হলে আমরা সবাই অনেক আনন্দ করতে পারবো।' - এভাবেই নিজের আনন্দের কথা জানায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্ভানা জাহান খাঁন টিয়া।

আরেক শিক্ষার্থী আরাফ কবির ঋদ্ধ বলে, 'আমি অনুষ্ঠানে গান করেছি। প্রথমে একটু ভয় লাগছিলো, কিন্তু পরে পুরো গান গাইতে পেরেছি। তখন অনেক ভালো লেগেছে।'

গান ও কবিতায় অংশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী নওশিকা মৌলি জানায় যে সে এ ধরনের অনুষ্ঠানে আবারও অংশ নিতে চায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের `জুতা আবিষ্কার` কবিতা থেকে নাটকের পরিবেশনা।

প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিনা ভূঁইয়া এ আয়োজন উপলক্ষে বলেন, 'আজ থেকে ২০ বছর আগে ধানমণ্ডির এ ক্যাম্পাসে অরণি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ক্রমেই এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন ধানমণ্ডিসহ শঙ্করে আমাদের আরেকটি শাখা আছে।' তিনি আরো জানান, রাজধানীর উত্তরায় নিজস্ব জমিতে বিদ্যালয়টিকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সব ঠিক থাকলে বিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তির আয়োজন সেখানেই হবে বলে আশাবাদী তিনি।

২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের একাংশ।

নিনা ভূঁইয়া বলেন, 'বর্তমানের প্রতিযোগিতার সময়ে অবশ্যই ভালো রেজাল্ট করার দরকার রয়েছে। তবে আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ভালো পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিকতার বোধসহ বেড়ে ওঠে। আমাদের চাওয়া, অরণির ছাত্রছাত্রীরা মুক্ত মন নিয়ে বড় হবে এবং ভালো মানুষ হবে। বর্তমানে চারদিকে নৈতিকতার যে অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে, তাতে আসলে ভালো মানুষ হওয়াটাই বেশি জরুরি।'