রাজনীতি

গণতন্ত্রপন্থী ৪ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৫ জুলাই ২০২২;  আপডেট: ০১:১৮, ২৯ অক্টোবর ২০২২

গণতন্ত্রপন্থী ৪ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন দণ্ডপ্রাপ্তদের একজন ইয়ো জিয়া থাও। ছবি : বিবিসি।

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনী সম্প্রতি দেশটির গণতন্ত্রপন্থী ৪ নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আজ সোমবার এ দণ্ড কার্যকর করা হয়। গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই মিয়ানমারে মৃত্যুদণ্ডের প্রথম ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ জনের মধ্যে মানবাধিকারকর্মী কো জিমি এবং আইনপ্রণেতা ইয়ো জিয়া থাওয়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'নির্মম ও অমানবিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নির্দেশনা দেওয়া এবং তা বাস্তবায়নের বন্দোবস্ত ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে' ওই ৪ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তবে রুদ্ধদ্বার ও একতরফা ওই বিচারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির মানবাধিকারবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী নেতারা। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি এ খবরে ব্যথিত হয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বলেও সূত্রটি উল্লেখ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবরে মিয়ানমারের ইনসিন কারাগারের সামনে আজ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা জড়ো হন। দণ্ডপ্রাপ্ত জায়ার থো-এর মা খিন উইন মে অভিযোগ করেন, তার ছেলের মৃত্যুদণ্ড কখন কার্যকর করা হবে- এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য না পাওয়ায় তিনি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যে যথাযথ প্রস্তুতিও নিতে পারেননি। তিনি বলেন, 'গত শুক্রবার যখন আমার ছেলের সঙ্গে জুমে কথা হয় তখন সে সুস্থ ও হাসিখুশি ছিলো। সে তখন আমাকে কারাগারে তার জন্যে চশমা, ডিকশনারি ও কিছু টাকা নিয়ে যেতে বলে। আমি আজ এগুলো নিয়ে কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।' তিনি বলেন, 'এজন্যে আমি ভাবিনি যে তাকে মেরে ফেলা হবে।'

এ ছাড়া ভাইয়ের মরদেহ এখনো বুঝে পাননি বলে জানিয়েছেন কো জিমির বোন এখনো। স্বজনদের খবর জানতে এভাবেই কারাগারের সামনে জড়ো হন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা।

বিচার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি দেশটির সরকার। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ৪ ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের পর মিয়ানমারে এটিই মৃত্যুদণ্ডের প্রথম ঘটনা। এর আগে দেশটিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। ২০২১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকেই এর বিরুদ্ধে দেশটিতে শুরু হয় বিদ্রোহী, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের আন্দোলন। দফায় দফায় চলতে থাকে সেনাবাহিনী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও গ্রেপ্তারের ঘটনা। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৪৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং প্রায় ২,১১৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দ্য অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) সূত্রে জানা যায়।

সূত্র : বিবিসি ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।