স্বদেশ

বিনম্র শ্রদ্ধায় উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস

স্বদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩;  আপডেট: ১৮:০৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বিনম্র শ্রদ্ধায় উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস

বিনম্র শ্রদ্ধায় আজ বিজয় দিবস উদযাপন করছে সারা দেশের মানুষ।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিনম্র শ্রদ্ধায় আজ দিবসটি উদযাপন করছে দেশের মানুষ। বিদেশে থাকা বাঙালি, বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোও এ উদযাপনে অংশ নিচ্ছে। সকাল থেকেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামে মানুষের ঢল। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারা সেখানে ফুল হাতে উপস্থিত হন।

যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ভোরে রাজধানীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিরা এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

দিবসটি উপলক্ষে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী প্রচার করছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। বিজয়ের আনন্দঘন এই দিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশীকে জানাই বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।

তিনি বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশী বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন।’

বিজয় দিবসের পৃথক আরেক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজয়ের এ মাসে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের; যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেই সব দেশ ও ব্যক্তির প্রতি যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৪৮-৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর এগারো দফা ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি। জাতির পিতা অনুধাবন করেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন - এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে, ইনশা আল্লাহ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র “‍বাংলাদেশ’’ প্রতিষ্ঠা হলো বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দিব - বিজয় দিবসে এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

এবারের বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভূগর্ভস্থ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন :

আজ সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী :

দেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আজ সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহরও ব্যবহার করা হয়। এ ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে বিক্রি করা হবে এবং পরে সারাদেশের অন্যান্য জিপিও ও প্রধান পোস্ট অফিসগুলোতেও পাওয়া যাবে।

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা :

বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেছেন ক্রিকেটাররা। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) থেকে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে টাইগাররা। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) অনুশীলনের আগে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা।

সূত্র : বণিক বার্তা, বাসস ও ইত্তেফাক।