রাজনীতি

হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নতুন আইন পাস

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২০ মার্চ ২০২৪;  আপডেট: ১০:০৮, ২১ মার্চ ২০২৪

হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নতুন আইন পাস

হংকংয়ের বেইজিংপন্থী সংসদ সদস্যরা গত মঙ্গলবার সর্বসম্মতিক্রমে `আর্টিকেল ২৩` এর প্রতি তাদের সমর্থন জানান। ছবি : বিবিসি।

হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নতুন একটি আইন পাস করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চীনের দক্ষিণের আধা-স্বায়ত্বশাসিত এ নগরের আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে এ আইনটি পাস করেন। চার বছর আগে হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ল বা এনএসএল) নামে এ ধরনের আরেকটি আইন বাস্তবায়ন করেছিলো বেইজিং।

'‌‌‌আর্টকেল ২৩' নামের নতুন এ আইন আগের সেই বিতর্কিত আইনের বর্ধিত অংশ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এনএসএলের কারণে হংকংয়ের সরকার বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে আজ বুধবার হংকংয়ের সংসদে নিয়মিত অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। এর একদিন আগেই গতকাল এক বিশেষ অধিবেশনে এ আইন নিয়ে ভোটাভুটি হয়। এ সময় সংসদের বেইজিংপন্থী আইনপ্রণেতারা এ প্রস্তাবের পক্ষে তাদের দৃঢ় সমর্থন জানান। গত ৮ মার্চ প্রথম নতুন এ আইনটি প্রস্তাব করা হয়।

আইনটি পাসের পর তা হংকংয়ের জন্য 'একটি ঐতিহাসিক দিন' উল্লেখ করে নগরের প্রধান নির্বাহী জন লি বলেন, ‘আগামী ২৩ মার্চ থেকে নতুন এ আইনটি কার্যকর হবে।’

এদিকে ‘ঐতিহাসিক এ যাত্রার’ অংশ হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছেন বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু লিয়াং । তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যতো দ্রুত এ আইন বাস্তবায়ন হবে, ততো দ্রুত জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

তবে নতুন এ আইনের মধ্য দিয়ে হংকং কর্তৃপক্ষ বেইজিং বিরোধীদের দমনে আরও বেশি ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও বিদ্রোহের মতো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এ ধরনের কাজে এ আইনে কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। এক্ষেত্রে তা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানা যায়।

এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহী প্রচার-প্রচারণার মতো লঘু অপরাধের জন্য কয়েক বছরের কারাদণ্ডের উল্লেখও নতুন এ আইনে রয়েছে।  এমনকি হংকংবিরোধী এ ধরনের কার্যকলাপ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই সংগঠিত হোক না কেন, নতুন এ আইনের কিছু ধারায় সেখানেই এ সংক্রান্ত বিচারকাজ পরিচালনা ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখা হয়েছে।

এভাবে এ আইনের মধ্য দিয়ে এক সময় এ অঞ্চলের নাগরিক অধিকার পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, এর আগে ২০১৯ সালে গণতন্ত্রপন্থীদের প্রতিবাদ-আন্দোলনে হংকংয়ে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার সৃষ্টি হয়। চীনা শাসন বিরোধী তীব্র এ আন্দোলনের পর পরই বেইজিং এখানে প্রথম এনএসএল কার্যকর করে।

এর পর থেকেই হংকংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে শুরু করে। কারণ সে সময় প্রথম সারির অনেক বিরোধী নেতাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়। অনেকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এমনকি অ্যাপেল ডেইলি ও স্ট্যান্ড নিউজ নামের নামকরা গণতন্ত্রপন্থী গণমাধ্যমও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এছাড়া এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সে সময় অনেক তরুণ পেশাজীবী ও মধ্যবিত্ত পরিবারও হংকং ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও তাইওয়ানে চলে যেতে বাধ্য হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৩ সালেও আরেকবার হংকংয়ে এ ধরনের একটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে সময় ব্যাপক আন্দোলন-প্রতিবাদের কারণে তা বাতিল করতে বাধ্য হয় সরকার।

তবে এবারের এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে হংকংয়ে তেমন কোনো আন্দোলন হয়নি। মূলত বিদ্যমান নিরাপত্তা আইনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে।