ফিচার ও মতামত

আকস্মিক সিদ্ধান্তে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা বন্ধ হোক

সজীব সরকার

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪;  আপডেট: ১১:৫০, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আকস্মিক সিদ্ধান্তে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা বন্ধ হোক

সামনের দিনগুলোতে গরম আরো বাড়বে - এমন আশঙ্কার কথাও জানানো হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।

ঈদের ছুটির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি তীব্র তাপদাহের কারণে বাড়ানো হয়েছিলো। এরপর আগামীকাল রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার খুলবে। প্রতিষ্ঠানগুলো আগামীকাল থেকে খুললেও তীব্র গরমের কারণে শ্রেণি কার্যক্রমে কিছুটা শিথিলতার পাশাপাশি অ্যাসেম্বলির মতো কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গরমসহ নানা কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।

প্রশ্ন হলো, গরমের যে তীব্রতার কারণে গত কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো, তা কি কমে গেছে? গরম কি এখন সহনীয় পর্যায়ে এসেছে? বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলো যেসব ভবনে পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোতে কি এই তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের সত্যিকার অর্থে পড়ালেখায় মনোনিবেশের মতো পরিবেশ আছে? 'ব্যয়বহুল' গুটিকতক প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সবই যেসব ভবনে বা ভবনের এক বা একাধিক ফ্লোর ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলো মোটেও এমন গরমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির জন্য উপযোগী নয়। অনেক স্কুলে শ্রেণিকক্ষগুলোর পুরনো ফ্যান ঠিকঠাক বাতাস দেয় না। সব স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ বা সুপেয় পানির ব্যবস্থাও নেই। সামনের দিনগুলোতে গরম আরো বাড়বে - এমন আশঙ্কার কথাও জানানো হচ্ছে।

এ বছর তাপের তীব্রতা অনেক বেশি হবে- এমন পূর্বাভাস অনেকদিন আগের। আর, গরমের এমন তীব্রতা যে সহসাই কমবে না, সেটিও আগে থেকেই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাপদাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কদিন বন্ধ রাখা হলো। শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বোঝা উচিত ছিলো, এমন গরম চলমান থাকবে। তাই, পূর্বাপর বিবেচনায় না নিয়ে আকস্মিক সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। বরং, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ না রেখে এই কদিন অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখতে বলা যেতো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি বন্ধ না রেখে অনলাইন কার্যক্রম, হোমওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্টের মতো শিক্ষণ প্রক্রিয়া চলমান রাখা যেতো। তাহলে, দীর্ঘদিন পড়াশোনা বন্ধ রাখার ক্ষতি এড়াতে চলমান এ তাপদাহের মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে না দিয়ে গরম খানিকটা সহনীয় পর্যায়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতো। আর, পড়ালেখার 'ক্ষতি পুষিয়ে নিতে' শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রাখতে হতো না।

এ ছাড়া, এমন পরিস্থিতিতে খোলা রাখতে হলে খোলা রাখার মতো যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া দরকার। যেমন : ভবন ও শ্রেণিকক্ষে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ক্ষেত্রভেদে বৈদ্যুতিক পাখা বা এসিগুলো সচল, কার্যকর ও পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত যোগান রাখা ইত্যাদি ব্যবস্থা নিতে বলা যেতো। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেও বলা দরকার। আরেকটি বিকল্প হতে পারে প্রতিদিনের পরিবর্তে দু-একদিন অন্তর শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখা।

অনলাইনে সাময়িকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে যারা সরব হয়ে ওঠেন, তারাই বরাবর অভিযোগ করে আসছেন, স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সঠিক ও শতভাগ কার্যকর কোনো শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে দেশে চলমান শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠ্যসূচি ও পাঠদান প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা কেউই আসলে সন্তুষ্ট নই। তাহলে, কেবল অনলাইনে কিছুদিন শ্রেণি কার্যক্রম চললেই কি পড়াশোনা নষ্ট হবে? অন্য সময় বা অফলাইনে তাহলে সবই ঠিক চলছে? তাহলে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এতো বিরোধ বা আপত্তি কেন?

কোভিড১৯ মহামারির সময়ও দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। তাদের দাবি ছিলো, অনলাইন কার্যক্রম বাতিল করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। ওই সময়টিতে পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে নিশ্চয়ই; কিন্তু, পড়াশোনা কি শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও বেশি জরুরি? তখন পর্যন্ত কোভিডের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসেনি, সবার জন্য টিকা নিশ্চিত হয়নি এবং হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা তখনও যথেষ্ট ছিলো না। এ অবস্থায় পড়াশোনার ক্ষতি এড়ানোর অজুহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া খুব বিবেচকের কাজ হতো কি? শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতির পরও অনেক প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত পাঠদান বা শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবস্থা নেই বলেও তো অভিযোগের কমতি নেই।

ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রতিবছর ঈদের দু-তিনদিন আগে ভাঙ্গাচোরা সড়ক মেরামতের কারণ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ অনেকের ছুটি বাতিল করে সরকার। বলা হয়, জনসাধারণের ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমাতে ভাঙ্গা সড়ক মেরামতের জন্য তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রত্যেক বছরের নিয়মিত ঘটনা এটি। এখানে প্রশ্নের সুযোগ থাকে : বছরজুড়ে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ দায়িত্বরত কর্তাব্যক্তিরা তাহলে কী করেছেন? সড়কগুলোর যে এমন বেহাল দশা, তা কি পুরো বছরে তাদের চোখে পড়েনি? সারা বছরে সড়কগুলো মেরামতের কথা মনে হয়নি? না কি, কেবল ঈদের দুদিন আগেই সড়কগুলো ভেঙ্গেছে?

এমন অ্যাডহক ভিত্তিতে আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের মজ্জাগত প্রবণতা। এমন অবিবেচনাপ্রসূত প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার।

আবারো শিক্ষার প্রসঙ্গে আসা যাক। আমি নিজেও শিক্ষক এবং শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সশরীর উপস্থিতিকেই আমি সবচেয়ে বেশি কার্যকর শিক্ষণ পদ্ধতি বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু, রোগ-শোক-মহামারি-দুর্যোগেও শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীর উপস্থিতির বাধ্যবাধকতার আমি পক্ষপাতী নই।

শ্রেণি কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হলে অবশ্যই পড়াশোনার ক্ষতি হয়। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও অফলাইন (শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি) কার্যক্রমের মতো কার্যকর নয়। তাই বলে দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বা কীসে তাদের ভালো-মন্দ- তা বিবেচনায় না নিয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাপ্রবাহে অ্যাডহক ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছি।

এই গরমে বাড়িতে অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে থেকেও অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে গরমজনিত অসুখ-বিসুখে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই শিশু। এ অবস্থায় দুর্বল অবকাঠামোর স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা কতোটা নিরাপদ? বাসে, রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে যাদের যাতায়াত করতে হয়, এই রোদে-ধুলায় তারা কতোটা নিরাপদ?

কথায় কথায় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ ঘোষণা না করে অনলাইন বা বিকল্প উপায়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা চলমান রাখা দরকার। তাহলে ঝুঁকির মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে বাধ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।

অনেক শিক্ষক প্রযুক্তি ব্যবহারে অদক্ষ বা অনাগ্রহী। কেবল এ কারণেও অনেকে শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার বিরোধিতা করেন। তারা হয় একেবারে বন্ধ রাখার পক্ষে অথবা যে-কোনো পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির পক্ষে জোর অবস্থান নেন। শিক্ষকদের মধ্যে প্রযুক্তি-ভীতির (টেকনোফোবিয়া) খেসারত শিক্ষার্থীরা কেন দেবে?

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বাইরে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি এখনো সহজলভ্য নয়। সেখানকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতারও অভাব রয়েছে। এ কারণেও অনেক সময় অনলাইন কার্যক্রমের বদলে সারা দেশের জন্য একরকম বা অভিন্ন (ইউনিফর্ম) ব্যবস্থা হিসেবে অফলাইন কিংবা অপারগতায় শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এমন বাস্তবতায় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ রাখা কিংবা ঝুঁকি জেনেও প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয়। বরং, সারা দেশের সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা এবং এসব প্রযুক্তি সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা দরকার।

প্রযুক্তি যদি মানবকল্যাণে ব্যবহার করা না যায় ও মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কাজে লাগানো না যায়, তাহলে তা অর্থহীন ও অসার। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকে শুরু করে চাকরি-ব্যবসাসহ সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কোভিডের সময় চল বাড়লেও এখনো অনেক দেশের অনেক কার্যক্রম অনলাইনে চলছে। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সেমিনারও একই উপায়ে হচ্ছে। দেশের টেলিভিশনগুলো এখনো অতিথিদের সাক্ষাৎকার প্রায়ই অনলাইনে নিচ্ছে। অনেক দেশেই জরুরি অনেক মিটিং অনলাইনে সেরে ফেলা হচ্ছে। এতে তাদের কেউই ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে না, পিছিয়েও পড়ছে না; বরং, তারা আমাদের মতো অনেক দেশের তুলনায় শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে এবং ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে কোভিডের অভিজ্ঞতায় অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠান উপলব্ধি করেছে, প্রযুক্তির ব্যবহার কাজ-কর্ম চলমান রাখার পাশাপাশি বরং কাজের গতিশীলতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। অনলাইননির্ভর ব্যবস্থা অনেক সাশ্রয়ীও। অনলাইন মিটিং, অনলাইন অফিস ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সড়কে যাতায়াত তথা যানবাহনের চাপ কমে। এতে ব্যক্তির খরচ সাশ্রয় হয়, বিষয়টি পরিবেশবান্ধব এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের অপরিহার্য খরচগুলোও (যেমন : বিদ্যুৎ বা পানি) অনেক কমে। এ কারণে অনেক দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের সপ্তাহে এক বা একাধিক দিন অনলাইন বা হোম অফিসের সুযোগও দিচ্ছে।

দেশের আবহাওয়া-জলবায়ু-পরিবেশ সবই এখন চরমভাবাপন্ন ও প্রচণ্ড বৈরি। বাতাসে ধুলা ও দূষণের দৌড়ে আমরা হরহামেশাই বিশ্বে প্রথম হই। যেখানে-সেখানে যেন-তেন অবকাঠামোর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে, যা মোটেও শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষাবান্ধব নয়। দেশের সড়ক, ট্রাফিক ও গণপরিবহন ব্যবস্থা জনবান্ধব তো নয়ই, বরং মানুষের দুর্ভোগের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। সড়কের বেশিরভাগ যানবাহনের ফিটনেস নেই বা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তীব্র গরম বা তীব্র শীত কিংবা বৃষ্টি-বন্যার মতো অবস্থায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠদানে মনোনিবেশ যে কতোটা কার্যকরভাবে হচ্ছে, সে খবর কে রাখছে? প্রতিদিন এমন দুর্ভোগের শিকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ভেবে দেখা হয় কি?

সরকার কোনোভাবেই এসবের দায় এড়াতে পারে না। সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেককে দায় নিতে হবে।

এ লেখার মূল বিষয় আগামীকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিরোধিতা করা নয়; আলোচনা বা বিতর্কের মূল বিষয়টি হলো, অ্যাডহক ভিত্তিতে আকস্মিক সিদ্ধান্তের বদলে সঠিক সময়ে ও পূর্বাপর বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চর্চা আমাদের বাড়াতে হবে। অফলাইন হলেই পড়ালেখা হলো আর অনলাইন হলেই পড়াশোনা ধ্বংস হলো- এমন নির্বিচার ও অযৌক্তিক ভাবনা বদল করতে হবে। সত্যিকার অর্থে শিক্ষাবান্ধব অবকাঠামো ও জনবান্ধব একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে পাঠদান ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে শিখতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় আরো আন্তরিক ও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীবান্ধব না হলে কোনোদিনই সুশিক্ষা নিশ্চিত হবে না এবং শিক্ষার সুফল মিলবে না।

সজীব সরকার : সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপার্সন, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।