অন্যান্য

চীনে শক্তিশালী ভ‍ূমিকম্পের আঘাত : নিহত কমপক্ষে ১২৬

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩;  আপডেট: ১৯:৪৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

চীনে শক্তিশালী ভ‍ূমিকম্পের আঘাত : নিহত কমপক্ষে ১২৬

ভূমিকম্প বিধ্বস্থ কুইনঘাই প্রদেশে কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা।

চীনের উত্তরপশ্চিমে আঘাত হানা এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১২৬ জন নিহত ও প্রায় ৭০০ এরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। গতকাল মধ্যরাতে ৬ দশমিক ২ মাত্রার এ ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আজ মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে প্রচন্ড বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে উদ্ধারকর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

চীনের গানসু প্রদেশের জিসহিসহান কাউন্টিতে সোমবার মধ্যরাতে প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পটি আঘাত করে। এতে ওই এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় উদ্ধারকারীরা ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে মানুষজনকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। আর যারা বাড়িঘর থেকে বের হতে পেরেছেন, তাদের রাত কেটেছে প্রচন্ড ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে গানসু প্রদেশে নিহতের সংখ্যা ছিলো ১১৩ আর আহত ৫৩৬ জন। একইসঙ্গে এ অঞ্চলের ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৩টিরও বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়।

এর মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ৬৭ জনকে উদ্ধার করেছে এবং ৬৮৫ জনকে এ প্রদেশ থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে বলেও জানানো হয়।

অন্যদিকে গানসু প্রদেশের প্বার্শবর্তী কুইনঘাই প্রদেশে এ ভূমিকম্পের আঘাতে এ পর্যন্ত ১৩ জন নিহত, ১৮২ জন আহত ও আরও প্রায় ২০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছে বলে আজ দুপুরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ভূমিকম্পটি মধ্যরাতের ঠিক আগে আগে আঘাত হানে, যে সময় অধিকাংশ মানুষই তাদের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী ভূমিকম্পটি ছিলো মাত্র ৬ মাইল গভীর ও এর মাত্রা ছিলো ৫ দশমিক ৯। তবে চীনের ভূমিকম্প কেন্দ্রের (The China Earthquake Networks Center/CENC) হিসাব অনুযায়ী এর মাত্রা ছিলো ৬ দশমিক ২।

ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল গানসু ও কুইনঘাই এর সীমান্তবর্তী পাহাড়ী এলাকা ছিলো বলে জানা যায়। এটি তিব্বতের মালভূমির একদম পূর্ব সীমায় অবস্থিত। এদিকে এ ভূমিকম্পের পর মঙ্গলবার সকালে আরও ৯টি আফটার শক অনুভূত হয়। এগুলো তিন ও তারও বেশি মাত্রার ছিলো এবং একেকটি ২০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে চলে বলে সিইএনসি সূত্রে জানা যায়।

 ভূমিকম্পের আঘাতে জিসহিসহান কাউন্টিতে ঘরবাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ অনেক এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়। এর ফলে ওইসব এলাকায় উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

এ অবস্থায় জীবিতদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাসহ আহতদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

একইসঙ্গে ভূমিকম্প বিধ্বস্থ এ দুটি প্রদেশের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল থেকে ২৮ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে দেশটির অর্থ এবং জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণায়ল। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ববার্তা সংস্থা সিনহুয়া সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

এদিকে ভূমিকম্প বিধ্বস্থ এই দুই প্রদেশে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার অগ্নিনির্বাপক কর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে জিসহিসহানে তাপমাত্রা মাইনাস ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী তাবুসহ বিছানা, কম্বল ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন আগে চীনে হঠাৎ করেই শীতের তীব্রতা প্রচন্ড আকার ধারণ করে। এমনকি দেশটির উত্তরের কিছু অংশে তাপমাত্রা রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

তবে ভূমিকম্পের ঘটনা চীনে নতুন কিছু নয়। দেশটির বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে দক্ষিণপশ্চিমে প্রায়ই এ ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত করে। তবে এর প্রায় এক দশক আগে চীনে এ ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ২০১৪ সালে দেশটির দক্ষিণপশ্চিমের ইয়ানন্না প্রদেশে সংঘটিত এ ভূমিকম্পে প্রায় ৬০০ মানুষ নিহত হয়।

এর আগে ২০০৮ সালে সিচুয়ান প্রদেশে সংঘটিত ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৯০ হাজার।

সূত্র : সিএনএন।