রাজনীতি

বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ২৬ এপ্রিল ২০২৪;  আপডেট: ২৩:২০, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপল এ চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আজ শুক্রবার সফরত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শি।

এর আগে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক করেন ব্লিনকেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়সহ দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।   

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একে অপরের 'শত্রু নয় বরং অংশীদার হওয়া উচিত' বলে ব্লিনকেনকে চীনা প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যম সিসিটিভি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে শি জিনপিং বলেন, ‌‌'এখনও এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যার সমাধান করা প্রয়োজন। তেমনি তা সমাধানের যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, ‌'চীনের উন্নয়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে বলে আমরা আশা করি। আর, এটি সম্ভব হলেই দেশ দুটির সম্পর্ক সত্যিকার অর্থেই স্থিতিশীল, উন্নত ও অগ্রসর হবে।'

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে আজ সকালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিনকেন। এ বৈঠকে দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কসহ তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে সাম্প্রতিক অস্থিরতার বিষয়গুলো উঠে আসে।

এক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ‘স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে’ বলে মন্তব্য করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং। কিন্তু, একইসময় নানা বিষয়ে দেশ দুটির মধ্যে মতপার্থক্যও বেড়ে চলেছে এবং এটি আলোচনা অব্যাহত রাখার কাজটি জটিল করে তুলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ওয়াং বলেন, ‘একইসময় এ সম্পর্কের মধ্যে নানা নেতিবাচক প্রবণতাও বেড়ে চলেছে এবং গড়ে উঠছে, আর এ কারণে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

এ বিষয়টিতে জোর দিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কি স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত, না আবারও পেছনে ধাবিত হয়ে সেই একই চক্রে ঘুরপাক খাওয়া উচিত।’

বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ কিছু এলাকা নিজেদের দখলে নেওয়া বিষয়ে পাশ্ববর্তী কয়েকটি দেশের সঙ্গে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে চীনের। এরকমই একটি দেশ হচ্ছে ফিলিপাইন। এ দেশটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র।

ফলে, এ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে চীনের। তবে, নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ না করে দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন নীতি প্রসঙ্গে চীনের অভিযোগের বিষয়টিতে  জোর দেন ওয়াং।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নায্য অধিকার অযৌক্তিভাবে দমন করা হচ্ছে এবং প্রধান আগ্রহের বিষয়টি ক্রমাগতভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।’   

শুক্রবার সকালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন।

তবে, নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধ সত্ত্বেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন।

তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এটাও সত্যি যে নানা কারণে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

তবে, নানা বিরোধের পরও কার্যকর কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এক্ষেত্রে, শেষ মুহূর্তের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, উভয় পক্ষেরই সে বিষয়গুলো আগে পরিষ্কার করার পরামর্শ দেন ব্লিনকেন ।

তিনি বলেন, ‘শুধু আমাদের নিজ নিজ দেশের জনগণ নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই আমাদের এটি করা দায়িত্ব।’

কিন্তু, গত বুধবার ব্লিনকেনের এ চীন সফর শুরু হয়। এর মাত্র একদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিলে স্বাক্ষর করেন।তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য দমনে এ বিলে অনেক বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এছাড়া, চীনের যেসব প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সাহায্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্লিনকেনের চীন সফরে আগ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকেও আলোচনা হয়। কারণ, এ যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি চীনের অব্যাহত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন না দিতে চীনকে অনুরোধ করেন ব্লিনকেন। তিনি বলেন, ‌‌'চীন অব্যাহতভাবে  অস্ত্রের জোগান না দিলে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়া কঠিন হতো।'

উল্লেখ্য, এটি গত এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ব্লিনকেনের দ্বিতীয় দফা চীন সফর। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং একটি সভায় যোগ দিবেন।

মূলত, এ সভাকে সামনে রেখেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বর্তমান এ চীন সফর।

সূত্র : ডয়চে ভেলে, বিবিসি, সিএনএন।