রাজনীতি

ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ : রাফা সীমান্ত বন্ধ করলো ইসরায়েল

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ৫ মে ২০২৪;  আপডেট: ২৩:৩৯, ৫ মে ২০২৪

ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ : রাফা সীমান্ত বন্ধ করলো ইসরায়েল

ইসরাইল সীমান্ত বন্ধের এ সিদ্ধান্ত এমন সময় নিলো, যখন ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় নিয়ে মিসরে আলোচনা চলমান রয়েছে।

গাজাসংলগ্ন রাফা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকা থেকে এ সীমান্তের মধ্য দিয়ে হামাস ইসরাইলে রকেট হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ রবিবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইসরাইল। রাফা হচ্ছে সীমিত কয়েকটি সীমান্তের একটি, যার মধ্য দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো হয়।

হামাসের এ রকেট হামলায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে বলে ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে। ফলে, তারা এ সীমান্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এদিকে, হামাস জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে এ হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরাইল। এর মধ্য দিয়ে তারা আবারও জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং এর বিভিন্ন স্থাপনা জঙ্গি কাজে ব্যবহার করছে এবং একইসঙ্গে সাধারণ জনগণকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করে দেশটি।

এ ঘটনার পর পর ইসরাইলের পক্ষ থেকেও পাল্টা হামলা চালানো হয়। এ সময় হামাসের রকেট হামলা চালানোর স্থানসহ নিকটবর্তী আরেকটি সেনা স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরাইল।

ইসরাইল সীমান্ত বন্ধের এ সিদ্ধান্ত এমন সময় নিলো, যখন ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় নিয়ে মিসরে আলোচনা চলমান রয়েছে। এ বৈঠকে হামাসের পক্ষ থেকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানানো হয়। কিন্তু, তাদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে ইসরাইল।

একইসঙ্গে, ইসরাইলের সঙ্গে বন্দী বিনিময়ের সময় অনন্ত ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে হামাস। তবে, এ বিরতি স্থায়ী হবে কিনা, এটিই এখন বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হামাসকে গাজার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার দিবে এবং এটি ইসরাইলের জন্য হুমকী বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

আজ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে হামাসের এ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তাহলে হামাস আবারও তাদের ব্যাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসবে, আবারও গাজার নিয়ন্ত্রণ নিবে এবং তাদের সেনা স্থাপনা পুনর্গঠন করবে এবং এর মধ্য দিয়ে আবারও আমার দেশের জনগণের জন্য হুমকী হিসেবে আর্বিভূত হবে - এসব ঘটনা মেনে নেওয়া জন্য আমরা প্রস্তুত নই।’

নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্য এটি হবে এক ভয়ানক পরাজয়।’

এদিকে, রাফা সীমান্তে হামলা চালানোর জন্য নিজ দল থেকে চাপে রয়েছেন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে, হামাসের কাছ থেকে বন্দীদের মুক্তি নিয়েও নিজ দেশে চাপের মধ্যে রয়েছেন তিনি।

তবে, বর্তমানে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে পালিয়ে রাফায় অবস্থান নিয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি। এ অবস্থায় সেখানে হামলা চালালে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।

ফলে, আপাতত সেখানে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় একটি কার্যকর পরিকল্পনা না করে হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরাইলের অন্যতম মিত্র দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, মাসব্যাপী চলা যুদ্ধ বিরতির আলোচনা থেকেও কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। এ অবস্থায় অস্থায়ী বা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা বন্দী বিনিময় নিয়েও অনিশ্চয়তায় রয়েছে উভয় পক্ষ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্তবর্তী ইসরাইলের সেনা ঘাঁটিসহ আরও কয়েকটি স্থানে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। তখন তারা ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করাসহ ২৫০ জনেরও বেশি ইসরাইলিকে বন্দী করে। এর পর দিনই গাজা উপত্যকায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।

এখনও চলমান এ হামলায় এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৭ হাজার ৯০০ এর বেশি আহত হয়েছে বলে গাজাভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়।

সূত্র : বিবিসি।