রাজনীতি

নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান : জাতিসংঘের জরুরি সেবাদান বাধাগ্রস্ত

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৮ আগস্ট ২০২৩;  আপডেট: ০০:৪৯, ৯ আগস্ট ২০২৩

নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান : জাতিসংঘের জরুরি সেবাদান বাধাগ্রস্ত

নাইজারে কোনোভাবে মানবিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সমস্যার মুখে পড়ছে জাতিসংঘ। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নাইজারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দেশটির সামরিক সরকারও সম্প্রতি আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছ। এটি বাস্তবায়িত হলে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক মুখপাত্র জানিয়েছে।

সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ‘দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস’ (ইসিওডব্লিউএএস) থেকে নাইজারে সামরিক হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নাইজারের সামরিক সরকার।

এ ছাড়া ইসিওডব্লিউএএস থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে সীমান্তপথ বন্ধের ঘোষণার কারণে নাইজারে বর্তমানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা শাখার প্রধান লুইস আওবিন মঙ্গলবার জানান।

এদিকে নাইজারে জরুরি সেবাপণ্যের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে এখন আরও অনেক বেশি মানুষের মৌলিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এ কারণে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাগুলো থেকে যতো দ্রুত সম্ভব সেখানে সাহায্য পৌঁছানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে আওবিন জানান।

তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে মানুষকে সাহায্য করার মতো প্রয়োজনীয় সেবাপণ্যের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আমি এখানে খাবার, টিকা এবং অর্থের মতো মৌলিক কিছু চাহিদার কথা বলছি যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুব শিগগিরই মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারবে। প্রাথমিকভাবে আমাদের লক্ষ্য ৪৩ লাখ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা দেওয়া, তবে এ সংখ্যাটি খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে।’

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তায় নিযুক্ত বিমান সেবা ব্যাহত হলেও নাইজার সরকারের পক্ষ থেকে এখনও তা বাতিল করা হয়নি বলে আওবিন এ সময় জানান।
 
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সাহায্য নিয়ে কোনো বিমান দেশটিতে আসছে না। তাই এটা এখন বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে খাবার সরবরাহ করতে হলে অবশ্যই তা বাইরে থেকে আসতে হবে।’

বর্তমাতে খাবার ও টিকার যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে কতোদিন চলবে তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও প্রতিদিনই দুর্গত মানুষের কাছে এসব পৌঁছাতে হচ্ছে বলে খুব দ্রুতই এ মজুদ ফুরিয়ে আসবে বলে সতর্ক করেন আওবিন।

এ ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে নাইজারে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের শিশু ও জনসংখ্যা তহবিলের মতো বিভিন্ন মানবিক সহায়তা সংস্থা তাদের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

গত সোমবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস এ বিষয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা জানানোসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে নাইজারে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, নাইজারে কোনোভাবে মানবিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কারণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দীর্ঘ আন্দোলনে জর্জরিত এ দেশটিতে বর্তমানে শিশু মৃত্যুহার বিশ্বে এরইমধ্যে সর্বোচ্চ।

এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত হওয়া প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সামরিক জান্তাকে গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো ইসিওডব্লিউএএস। তা না হলে এ জোটের পক্ষ থেকে নাইজারে সামরিক হামলার হুমকি দেওয়া হয়।
 
এ অবস্থায় সম্ভাব্য হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বর্তমান সামরিক সরকার থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা জানানোসহ সামনের সংকটময় সময়ের জন্য দেশের জনগণকে প্রস্তুত থাকার ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে আওবিন বলেন, ‘নাইজারের জনগণ আরও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে, তাই আমাদের যেভাবে সম্ভব তাদেরকে সাহায্যের উপায় খুঁজে বের করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

সূত্র : আল-জাজিরা।