রাজনীতি

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোরদার লড়াই

নতুন এলাকা দখলের দাবি বিদ্রোহীদের

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১৪ নভেম্বর ২০২৩;  আপডেট: ২৩:৫৭, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোরদার লড়াই

একের পর এক এলাকা দখলের দাবি করে চলেছে সিএনএফ।


মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান লড়াই আরও জোরদার হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ ‌দলটি দেশটির উত্তর-পশ্চিমাংশে সেনাবাহিনীর দু’টি ঘাঁটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করেছে। গতকাল সোমবার স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মিয়ানমারের চিন প্রদেশে সশস্ত্র এ বিদ্রোহী দলটি সেনাবাহিনীর দুটি ঘাঁটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। ঘণ্টাব্যাপী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তারা এ সাফল্য পায় বলে ওই গণমাধ্যম জানায়। মিয়ানমারের এ প্রদেশটি ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কাছে অবস্থিত।

চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) নামের এ সশস্ত্র বিদ্রোহী দলটির প্রায় ৮০ জন যোদ্ধা সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের পর ঘাঁটি দু’টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় বলে সিএনএফের ভাইস চেয়ারম্যান সুই খার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান।

এর গত দুই সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে এ দলটি পাশের রাখাইন ও শান রাজ্যও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এখন দলটি ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সিএনএফ থেকে জানানো হয়। সেখানে থাকা সেনাবাহিনীর আরও দু’টি ঘাঁটিও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া তাদের উদ্দেশ্য বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে সিএনএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুই খার বলেন, ‘আমরা আরও সামনে এগিয়ে যাবো। আমাদের কৌশল হচ্ছে গ্রাম থেকে শহর হয়ে রাজধানী পর্যন্ত যাওয়া।’

এ অবস্থায় এ দলের সঙ্গে লড়াই আরও জোরদার হবে বলেই ধারণা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর পরিপ্রেক্ষিতে এরইমধ্যে তারা দেশের আরও অনেক জায়গায় নতুন করে মার্শাল ল’ জারি করেছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিন আং লেইং দেশটির ক্ষমতা দখল করে। এর পর থেকেই মিয়ানমারে গণবিদ্রোহ শুরু হয়। পরবর্তীতে এটি সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়, যা রুখতে সেনাবাহিনীও বলয় প্রয়োগ শুরু করে। এ অবস্থায় মিয়ানমার দিন দিন রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে।

এর আগে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গারা দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে জাতিগত সহিংসতা ও নিধনের শিকার হয়। এ অবস্থায় প্রায় অধিকাংশ রোহিঙ্গাই জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে প্বার্শবর্তী বাংলাদেশ ও ভারতসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে আশ্রয় নেয়।

তবে পরবর্তীতে এ অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এর (এএ) সঙ্গে সেনাবাহিনীর এক চুক্তির মধ্য দিয়ে রাখাইন রাজ্যে আপাত স্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু ২০২১ সালের নভেম্বরে ‘এএ’ রাজনৈতিকভাবে রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিলে এ চুক্তি এক প্রকার ভেঙ্গে পড়ে।

মূলত রাখাইন রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জাতিগোষ্ঠী নিয়ে ২০০৯ সালে এ দলটি গঠিত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো এ রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন।

এছাড়াও মিয়ানমারে আরও অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজ রাজ্যের স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য যুগ যুগ ধরে ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।

সূত্র : আল-জাজিরা।