জাপানে দলীয় প্রধান নির্বাচনে ৯ প্রার্থীকে মনোয়ন এলডিপির
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০০:১৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দলের নেতা নির্ধারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করেছে এলডিপি।
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) দলীয় প্রধান নির্বাচনে ৯ জন প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোয়ন দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির তরফ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দলের নেতা নির্ধারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করেছে এলডিপি।
এলডিপির বর্তমান দলীয় প্রধান ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার গত তিন বছরের শাসনকাল নানা কারণে বিতর্কিত ছিলো। এসব কারণে তিনি তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাই, নতুন নেতা নির্বাচনে এ উদ্যোগ নিলো দলটি। তবে, জাপানের সংসদে বর্তমানে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে, তাদের দলের নির্বাচিত নেতাই হবেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ।
এক্ষেত্রে, দলের প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর পরই জনসমর্থন পেতে এলডিপির পক্ষ থেকে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা নিয়োগসহ নতুন সংসদেরও ঘোষণা দিতে পারে দলটি ।
এদিকে, দলীয় প্রধান হিসেবে মনোনীত নয় প্রার্থীর মধ্যে শিনজিরো কইজুমির (৪৩) নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কইজুমির ছেলে ও দেশটির সাবেক পরিবেশমন্ত্রী। এছাড়াও মনোনীত প্রাথীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তামন্ত্রী স্যান্যায়ে তাকাইচি (৬৩)। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
তবে, নির্বাচিত হলে ‘পুরোনা ধারার এলডিপি’ বদলে ফেলার অঙ্গীকার করেছেন কইজুমি। একইসঙ্গে, নানা সংস্কারের মধ্য দিয়ে পুরো দেশকেই আরও উন্নত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। এক্ষেত্রে, চাকরির বাজারকে আরও যুগোপযুগী করা এবং নির্বাচিত হলে জনসমর্থন বাড়াতে আগাম নির্বাচনেরও অঙ্গীকার করেন কইজুমি।
একইসঙ্গে, এ অঞ্চলে চীনের আধিপত্য কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সমমনা অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারেরও অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তবে, নির্বাচিত হলে চীন এবং উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানান এ প্রার্থী।
এদিকে, কইজুমির পরই জাপানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগেরু শিবা (৬৭) শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে বিভিন্ন জনমত জরিপে উঠে এসেছে। তিনি এবার পঞ্চমবারের মতো এ পদের জন্য লড়ছেন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের পর্যাপ্ত সমর্থনের অভাবে তিনি কখনো জয়ী হতে পারেননি। ফলে, এটিই তার শেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে শিবা জানিয়েছেন।
তবে, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় দক্ষ শিবা নির্বাচিত হলে ন্যাটো সেনা জোটের মতো এশিয়াতেও একটি জোটের প্রস্তাব করবেন বলে জানান। একইসঙ্গে, তিনি তাইওয়ানের স্বাধীনতায়ও বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও, লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা এবং জাপানের নিম্ন জন্মহার ও জনসংখ্যা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের প্রথম দিকে এলডিপির নেতা হিসেবে পুনরায় নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও এলডিপি নেতা ফুমিও কিশিদা। একইসঙ্গে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি। এসব সিদ্ধান্ত হঠাৎ এলেও দল বা দেশের জন্য তা অপ্রত্যাশিত ছিলো না।
কারণ, ২০২১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলো কিশিদার সরকার। এর মধ্যে জাপানে জীবন-জীবিকার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও এলডিপির মধ্যে দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
তবে, জাপানে আগে কখনোই কোনো প্রধানমন্ত্রী এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। সেক্ষেত্রে, টানা তিন বছর ক্ষমতায় থেকে অষ্টম দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন কিশিদা।
সূত্র : আল-জাজিরা।