উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বেড়ে ২০, আহত ১৭১
স্বদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ২১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:৩২, ২৩ জুলাই ২০২৫

এখনো নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া না গেলেও তাদের অধিকাংশই শিশু এবং তারা মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে পৌঁছেছে। আহত এ পর্যন্ত ১৭১ জন। বাংলাদেশ আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আজ সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
হতাহতের ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ- ৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আজ বেলা ১ টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়ন করে।
এর কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ বেলা ১টা ১৮ মিনিটে বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে। মূলত, উড্ডয়নের পর বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বলে বলে আইএসপিআর জানায়।
আইএসপিআর জানায়, ‘দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।’
আকস্মিক এই বিমান দুর্ঘটনায় বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মো. তৌকির ইসলামসহ এ পর্যন্ত মোট ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তাদের অধিকাংশই শিশু এবং তারা মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের মৃতদেহ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না তাঁদের মৃতদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আহতদের মধ্যে বর্তমানে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৮ জন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, ঢাকা মেডিকেলে ৩ জন, ঢাকা সিএমএইচে ১৭ জন, কুর্মিটোলায় ১ জন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক হসপিটালে ৬০ জন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে আইএসপিআর জানায়।
আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানানো হয়।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও সব বেসরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপারগতায় রোগীকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে, দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। এ সময় আহতদের সুচিকিৎসাসহ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের আশ্বাস দেন তিনি। এর আগে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল ভবন ঘুরে দেখেন এবং উদ্ধার তৎপরতা সম্পর্কে খোঁজ নেন।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পরপরই সন্তানদের খোঁজে কলেজ ক্যাম্পাসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীদের মা, বাবা ও স্বজনেরা। তাঁদের কেউ কেউ এখনও সন্তানের খোঁজ পাননি বলে জানা গেছে।
এ অবস্থায় নিখোঁজ স্কুল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জরুরি যোগাযোগের জন্য কয়েকটি মুঠোফোন নম্বর দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সেগুলো হলো—মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেড–01769024202, সিএমএইচ বার্ন ইউনিট–01769016019, সিএমএইচ ইমার্জেন্সি 01769013311, মাইলস্টোন স্কুল অ্যাডমিন অফিসার–01814774132, ভাইস প্রিন্সিপাল–01771111766 এবং জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ (পুলিশের ইমার্জেন্সি সেল থেকে বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেবে)।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর পরই বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় আহতদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় বলে আইএসপিআর থেকে জানানো হয়।
একইসঙ্গে, অগ্নিদগ্ধদের নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। দগ্ধদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন । এদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী বলে জানা যায়।
এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জরুরি হটলাইন চালু করা হয়েছে। হটলাইন নম্বর-০১৯৪৯০৪৩৬৯৭। রক্তদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ ।
অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে বলে জানায়। একইসঙ্গে, দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে বিমানবাহিনী ইতিমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বর্তমানে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিধ্বস্ত বিমানটি ছিলো চীনে তৈরি একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান।
সূত্র : বাসস, প্রথম আলো ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।