রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করেছে পোল্যান্ড
রাশিয়ার বিরুদ্ধে `আগ্রাসনের` অভিযোগ
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬:০১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫; আপডেট: ১৬:০৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠকে বসেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।
রাশিয়ার একাধিক ড্রোন গুলি ছুঁড়ে ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে পোল্যান্ডের সামরিক বাহিনী। আজ বুধবার এ বাহিনী থেকে বলা হয়, নিকটবর্তী দেশ ইউক্রেনে হামলার সময় রাশিয়ার কয়েকটি ড্রোন আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পোল্যান্ডে ঢুকে পড়ে। ঘটনাটিকে ইউরোপ ও ন্যাটোভুক্ত বাহিনীগুলোর জন্য 'উস্কানি' বলে মনে করা হচ্ছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, ন্যাটোর জোটভুক্ত কোনো দেশের ভেতরে রাশিয়ার ড্রোন গুলি করে ধ্বংসের ঘটনা এটিই প্রথম।
ড্রোন অনুপ্রবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা সম্ভবত বেশ বড় রকমের উস্কানির মুখোমুখি হয়েছি।'
'পরিস্থিতি বেশ গুরুতর' উল্লেখ করে তিনি বলেন, পোল্যান্ড এ ধরনের আক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, পোল্যান্ডের আকাশসীমা একাধিকবার লঙ্ঘনের ঘটনায় দেশটি সামরিক অভিযানেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারল নাভরৎস্কি এক এক্স বার্তায় বলেছেন, 'জন্মভূমির নিরাপত্তা আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।'
দেশটির অপারেশন কমান্ড বুধবার সকালে এক এক্স বার্তায় বলেন, 'এ ঘটনা আগ্রাসনমূলক যা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে বড় হুমকি।'
এ ঘটনায় গত রাতে পোল্যান্ডের ওয়ারশ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বুধবার সকালে তা আবারো চালু করা হয় বলে জানায় পোলিশ কর্তৃপক্ষ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, অন্তত ৮টি 'শাহেদ' ড্রোন পোল্যান্ডকে লক্ষ্য করে ওড়ানো হয় যা ইউরোপের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘটনা। ইউক্রেনে গত রাতেই ৪১৫টি ড্রোন ও ৪০টি মিসাইল দিয়ে আঘাত হানা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পোল্যান্ড ন্যাটো জোটের সদস্য দেশ। নীতিগতভাবে এ জোট মনে করে, এক সদস্যের ওপর হামলা মানে সবার ওপরই হামলা। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে এ জোটের মধ্যে আস্থার জায়গাটি দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করে সদস্য দেশগুলো। ট্রাম্প ইউরোপকে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করতে বলেছেন।
পোল্যান্ডের এ ঘটনা এমন সময় ঘটেছে যখন ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির জন্য মধ্যস্থতা করছেন, কিন্তু এ আলোচনার মধ্যেও রাশিয়া আকাশপথে আক্রমণের হার বাড়িয়েই চলেছে।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কালাস একে 'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউরোপিয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, 'নানা ইঙ্গিত থেকে মনে হচ্ছে, ঘটনাটি পরিকল্পিত; অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা নয়।' তিনি আরো বলেন, 'রাশিয়ার এ যুদ্ধ বাড়তির দিকে; শেষের দিকে না।'
ন্যাটোর নবীনতম সদস্য সুইডেন মন্তব্য করেছে, পোল্যান্ডের সীমার মধ্যে রাশিয়ার ড্রোনের উপস্থিতি 'গ্রহণযোগ্য নয়'।
সুইডেন, লিথুয়ানিয়া ও নেদারল্যান্ডসহ একাধিক দেশই এ ঘটনায় একইরকম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ইউক্রেন ও পোল্যান্ডে রাশিয়ার এমন আগ্রাসন গোটা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্যই বড় হুমকি।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন 'পশ্চিমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন'।
এক্স বার্তায় তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের ওপর বড় ধরনের হামলার সময় রাশিয়ার ড্রোন পোল্যান্ডে ঢুকে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এটাই বোঝা যায় যে পুতিনের মধ্যে দায়মুক্তির ধারণা দিন দিন বাড়ছে।'
সতর্ক রয়েছে ন্যাটো
পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিসভ কোশিনিয়াক-কামিশ জানিয়েছেন, ঘটনার সময় দেশটি ন্যাটো কমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলো। ভূপাতিত ড্রোনগুলোর খোঁজে সেনা অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
জনসাধারণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি, ড্রোনগুলোর কোনো অংশ কেউ খুঁজে পেলে তা জানাতেও অনুরোধ করেছেন।
অপারেশন কমান্ড থেকে জানানো হয়েছে, সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি চলছে এবং তাৎক্ষণিক কোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।
পোলিশ সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, স্থলভাগে ও আকাশে নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পোল্যান্ড পূর্বদিকে রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশের সঙ্গে নিজেদের সীমানা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলো। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শুক্রবার থেকে রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ার কারণে পোল্যান্ড এ সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থাটি উল্লেখ করে, বড় আকারের এ মহড়া শুধু পোল্যান্ড নয়, এর পাশে অবস্থিত ন্যাটোভুক্ত দেশ লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সূত্র : সিএনএন।