রাজনীতি

প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পেলো ভারত

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২২ জুলাই ২০২২;  আপডেট: ০১:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০২২

প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পেলো ভারত

একজন স্কুলশিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের নারী দ্রৌপদী মুর্মু। ছবি : পিটিআই।

নতুন ইতিহাস গড়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ৬৪ বছর বয়সী মুর্মু ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি, প্রথম আদিবাসী নারী রাষ্ট্রপতি এবং সবচেয়ে কমবয়সী রাষ্ট্রপতি। প্রতিভা পাতিলের পর ভারতের দ্বিতীয় নারী রাষ্ট্রপতি হলেন তিনি।

মুর্মুর জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতারা।

ক্ষমতাসীন বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থী যশোবন্ত সিনহাকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি।

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষে ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন দ্রৌপদী মুর্মু।

নয়াদিল্লিতে দ্রৌপদী মুর্মুর অস্থায়ী বাসভবনে গিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে তিনি টুইটারে অনেকগুলো বার্তাও দিয়েছেন। মোদি বলেছেন, 'দ্রৌপদী মুর্মুজির জীবন, সংগ্রাম ও সাফল্য সব ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করে। তিনি দেশের নাগরিকদের কাছে, বিশেষ করে দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে আশার আলো।'

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মাও দ্রৌপদী মুর্মুকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, 'ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোনো নারী প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ এবং এমন অনন্য উপহার দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ।'

দ্রৌপদী মুর্মু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী। আদিবাসী আবেগকে পুঁজি করেই এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এর আগে তিনি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। এর বিপরীতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনীত করেন ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিজেপির একসময়ের শীর্ষ নেতা যশোবন্ত সিনহাকে। মমতার মনোনীত প্রার্থী যশোবন্ত সিনহাকে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করে ৩৪টি বিরোধী দল। কিন্তু এসব দলের অনেক নেতা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে মুর্মুকে ভোট দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে একজন আদিবাসী নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার এই কৌশল বিজেপির কাজে লেগেছে। এর মধ্য দিয়ে বিরোধীদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে পেরেছে বিজেপি। এ ছাড়া ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনেও মোদির দল আদিবাসী ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকবেন বলে তারা মনে করা হচ্ছে।

ভারতে গত সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির ৭৭১ জন সংসদ সদস্য এবং ৪ হাজার ২৫ জন বিধায়ক ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশ নেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সংসদ ভবনে ভোটগণনা শুরু হয়। চার দফা ভোটের মধ্যে তিন দফার ভোট গণনার পরই মুর্মুর জয় নিশ্চিত হয়।

উড়িষ্যার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামের রায়রংপুর এলাকায় একটি সাঁওতাল পরিবারে ১৯৫৮ সালের ২০ জুন দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম। তার বাবা এবং দাদা উভয়েই পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার অধীনে গ্রামের প্রধান ছিলেন। রাজনীতিতে আসার আগে মুর্মু একজন স্কুলশিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি কাউন্সিলর, বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত কয়েক দশক ধরে মুর্মু ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু ওই সময় বিহারের রাজ্যপাল ও দলিত নেতা রাম নাথ কোবিন্দকে সরকার রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বেছে নেয়।

সূত্র : সিএনএন, ডয়চে ভেলে, বাসস, প্রথম আলো, সমকাল ও বিডিনিউজ২৪।