থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষ : নিহত ১১
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:৫৩, ২৫ জুলাই ২০২৫

সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে থাকে বলে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিতর্কিত ভূখণ্ড নিয়ে দেশ দুটির সেনাবাহিনীর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ সংঘাত শুরু হয়। এতে শিশুসহ আরও প্রায় ১৪ নাগরিক আহত হয়েছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী দুটি মন্দিরের কাছে আজ সকাল প্রায় সাড়ে সাতটায় প্রথম এ সংঘাতের শুরু হয়। পরবর্তীতে দিনব্যাপী চলা এ সংঘাত সীমান্ত ছাড়াও আরও প্রায় ছয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। নতুন করে এ সংঘাত শুরুর জন্য উভয় দেশই একে অপরকে দায়ী করছে।
এদিকে, সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে থাকে বলে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়। এ সময় বোমার বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে তারা কংক্রিটের ব্যাঙ্কারের ভেতর আশ্রয় নেয়।
সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান মোতায়েন করা হয়। এ সময় দেশটি এ বিমানের সাহায্যে কম্বোডিয়ার একটি সেনাঘাঁটি ধ্বংস করে বলে থাই বাহিনীর তরফ থেকে দাবি করা হয়।
এ সময় থাই বিমান থেকে সড়কে দুটি বোমা ফেলা হয় বলে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ করা হয়।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সব সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেয় থাইল্যান্ড।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার নমপেনে অবস্থিত থাই দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়াসহ দেশটিতে অবস্থান করা সব থাই জনগণকে দ্রুততার সঙ্গে কম্বোডিয়া ত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় চীনও কম্বোডিয়ায় অবস্থান করা তাদের নাগরিককে থাই সীমান্ত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়।
এদিকে, এ সংঘাত ও সহিংসতার জন্য উভয় পক্ষই অপরকে দায়ী করে চলেছে। থাই সেনাবাহিনীর মতে, তারা তা মুয়েন মন্দির পাহারা দেওয়া সময় তাদের আকাশসীমার উপর দিয়ে কম্বোডিয়ার একটি ড্রোন উড়ে যেতে দেখে।
পরবর্তীতে, রকেট-সম্বলিত একটি গ্রেনেড নিয়ে এক কম্বোডিয়ান সেনা থাই সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত চলে আসে বলে অভিযোগ করে থাইল্যান্ড। এ সময় থাই সেনারা চিৎকার করে তাদের সতর্ক করার চেষ্টা করলেও কম্বোডিয়ার সেনারা গুলি ছোঁড়া শুরু করে বলে থাইল্যান্ডের তরফ থেকে দাবি করা হয়।
একইসঙ্গে, তারা থাই জনগণকে লক্ষ্য করেও গুলি চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এ সময় কম্বোডিয়ার রকেট ও বোমা হামলায় থাই সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ৩ জন আহত ও ১ জন নিহত হয় বলে থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দাবি করা হয়।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের ক্রমাগত অযৌক্তিক সেনা আগ্রাসনকে এর জন্য দায়ী করে একে সর্বোচ্চ পর্যায়ের শত্রুতা ভাবাপন্ন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলে সমালোচনা করে কম্বোডিয়া।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা এক বার্তায় এ বিষয়ে বলা হয়, ‘কম্বোডিয়ায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে থাই সেনাবাহিনী আমাদের দেশের ভৌগলিক সার্বভৌমত্বের অখণ্ডতা বিনষ্টের অপচেষ্টা করেছে। ফলে আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আত্মরক্ষার যৌক্তিক অধিকারের ভিত্তিতে আমাদের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক আইন মেনে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।’
এ অবস্থায় এ পরিস্থিতি উত্তরণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছে কম্বোডিয়া।
এদিকে, এমন এক সময় দেশ দুটির মধ্যে এ উত্তেজনা শুরু হলো, যার মাত্র একদিন আগেই থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া থেকে তার দেশের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে। একইসঙ্গে, কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও বহিষ্কার করা হবে বলে সতর্ক করা হয়।
মূলত, গত এক সপ্তাহের মধ্যে দু’জন থাই সেনা ল্যান্ডমাইনের আঘাতে আহত হওয়ার পর পরই এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। সম্প্রতি, বিরোধপূর্ণ এলাকায় কম্বোডিয়া এসব মাইন বসিয়েছে বলে অভিযোগ করে ব্যাংকক।
উল্লেখ্য, এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেল নামের একটি স্থান নিয়ে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কে জড়িয়ে আছে। এ স্থানটিতে একইসঙ্গে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত রয়েছে।
বহু প্রাচীন মন্দিরে সমৃদ্ধ এ স্থানটির সীমান্ত রেখা কোথা থেকে টানা হবে, মূলত এ নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্কে জড়িয়ে আছে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।