মাদাগাস্কারের ক্ষমতা নিলো দেশটির সেনাবাহিনী
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৫; আপডেট: ২৩:৫৪, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগের খবরে মাদাগাস্কারবাসীর উল্লাস। ছবি : বিবিসি।
মাদাগাস্কারের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ক্যাপস্যাট নামে দেশটির সেনাবাহিনী একটি বিশেষ দল । দেশটির নতুন নেতা কর্ণেল মাইকেল র্যান্দ্রিয়ানিরিনা আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ক্যাপস্যাটের পক্ষ থেকে তাকে দলের প্রধান হিসেবেও নির্বাচিত করা হয়।
দেশটিতে জেন-জি প্রজন্ম ও নিরাপত্তা বাহিনীর আন্দোলনের মুখে গতকাল রবিবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে র্যাজোলিনা। এর পরই দ্বীপদেশটির ক্ষমতা নিজেদের দখলে নেয় সেনাবাহিনীর এ দলটি।
মাদাগাস্কারের জাতীয় রেডিওতে দেওয়া এক ভাষণে এ বিষয়ে কর্ণেল মাইকেল র্যান্দ্রিয়ানিরিনা বলেন, ‘আমরা দেশের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছি।’
দেশটিতে গড়ে উঠা জেন-জিদের এ আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে এতে অংশ নেয় ক্যাপস্যাট। সে সময় তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্ণেল র্যান্দ্রিয়ানিরিনা।
এদিকে, ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়াসহ জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ ছাড়া আর সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত ঘোষণা করে এ সেনাদল। একইসঙ্গে, কর্ণেলের দেওয়া ভাষণের কিছুক্ষণ আগেই প্রেসিডেন্ট র্যাজোলিনাকে অভিসংশন করতে নিম্নকক্ষে ভোটও অনুষ্ঠিত হয়।
তবে, পূর্ব আফ্রিকার এ দেশটিতে বিক্ষোভ চলাকালে জাতীয় সংসদ বিলুপ্তির আদেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। এমনকি, সপ্তাহব্যাপী চলা তীব্র আন্দোলনের মুখে একটি বিমানে করে ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছাড়তেও অস্বীকৃতি জানান তিনি। আন্দোলনে জেন-জিদের প্রধান দাবি ছিলো প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ।
এদিকে, কর্ণেল র্যান্দ্রিয়ানিরিনার দেওয়া ভাষণ সম্পর্কে সাবেক প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসদের যে কোনো অধিবেশন অসাংবিধানিক এবং এ থেকে নেওয়া যেকোনো আইনি পদক্ষেপ মূল্যহীন এবং বাতিলযোগ্য বলে মন্তব্য করা হয়েছিলো।
এর আগে, জীবনের ঝুঁকি থাকায় তিনি নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হন বলে প্রেসিডেন্ট র্যাজোলিনা জানিয়েছিলেন। রবিবার তিনি ফ্রান্সের একটি সেনা বিমানে করে দেশ ত্যাগ করেন বলে বিরোধী দলের এক কর্মকর্তা ও এক সেনা সদস্য নিশ্চিত করেন।
প্রেসিডেন্টের দেশ ত্যাগের খবরে আজ উল্লাসে ফেটে পড়ে জনগণ। এ সময় তাদের নেচে-গেয়ে আনন্দ করতে দেখা যায়। একইসঙ্গে, অনেকে নানা ধরনের ব্যানার প্রদর্শন করে, যার একটিতে প্রেসিডেন্ট র্যাজোলিনাকে ফ্রান্সের হাতের পুতুল/দালাল বলে উল্লেখ করতে দেখা যায়।
মূলত, র্যাজোলিনার দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং মাদাগাস্কারের সাবেক ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের প্রতি তার সমর্থনই জনগণের এ অসন্তোষের কারণ।
এদিকে, মূলত সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ ঘাটতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ জানিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেশটিতে প্রথম আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে দেশে বিদ্যমান দুর্নীতি, দৈনন্দিন সেবার ঘাটতি এবং সর্বোপরি দুর্বল সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে জনগণ।
এ অবস্থায় ক্যাপস্যাটের সমর্থন হারিয়ে ক্রমান্বয়ে জনবিচ্ছিন্ন হতে থাকেন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে র্যাজোলিনা। কারণ, সেনাবাহিনীর বিশেষ এ দলটিই ২০০৯ সালে তাকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করেছিলো।
কিন্তু, এক সময় তাদের উপর জারি করা আন্দোলনকারীদের উপর গুলি করার নির্দেশ অমান্য করে দলটি। একইসঙ্গে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয় ক্যাপস্যাট। এ অবস্থায় আন্দোলনের এক পর্যায়ে হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে মাদাগাস্কারের রাজধানী অ্যান্তানানারিভোর প্রধান চত্ত্বরে জড়ো হতে সাহায্য করে তারা।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেওয়াসহ নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয় দলটি। এ অবস্থায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, মাদাগাস্কারের প্রায় ৩ কোটি জনগণের তিন-চতুর্থাংশই দরিদ্র। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর ২০২০ সালে এসে দেশটির মাথাপিছু গড় আয় ৪৫ শতাংশে দাঁড়ায় বলে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যে জানা যায়।
সূত্র : সিএনএন, বিবিসি।