সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১:২৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫; আপডেট: ২১:৩৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর পর সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। ছবি : সিএনএন।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাদগা প্রাসাদ শার্মা অলি (কেপি শার্মা) আজ মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। দেশটিতে চলমান ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পর পরই নেপালের সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
নেপালের তরুণদের (জেন-জি) এ আন্দোলন চলাকালে গতকাল সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত ও আরও প্রায় ১৫০ জন আহত হয়।
নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সমাধান এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়, এ কারণে আজ আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ালাম।’
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, পরবর্তী নেতা নির্বাচনে প্রয়োজনীয় আলোচনা ও প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই রাজধানী কাঠমাণ্ডুর। মূলত, সরকার থেকে ইন্সটাগ্রাম ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের আরও ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধের ঘোষণা আসার পরই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় আন্দোলকারীদের দমাতে নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান থেকে পানি ও কাঁদানে গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে গুলি ছুঁড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
তবে, আজ সকালেই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে, আজ রাতে এ সংক্রান্ত একটি জরুরি সভা আহ্বান করেন নেপালের যোগাযোগমন্ত্রী পৃথিবী সুব্বা গুরাং। কিন্তু, এর আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে আন্দোলনকারীরা। মূলত, সরকারের তরফ থেকে জারি করা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ তুলে নিতেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে তারা। এর অংশ হিসেবে এক সময় সংসদ ভবন ছাড়াও প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ অবস্থায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বার্তা দিয়ে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে নেপালের সেনাবাহিনী।
এদিকে, গতকাল সোমবার আন্দোলনের মূল বিষয়বস্তু ছিলো সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এ সময় আন্দোলনকারীদের ‘দুনীর্তি বন্ধ কর, স্যোশাল মিডিয়া নয়’ - এ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
তবে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরও আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারী, যাদের অধিকাংশই মূলত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী এবং স্কুল বা কলেজের পোশাক পড়া ছিলো, তাদের মধ্যে দেশের নানা বিষয়ে ব্যাপক হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এমনই এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বিষ্ণু থাপা চেত্রি বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) বলে, ‘আমি এখানে এসেছি আমাদের দেশের বিশাল আকারের দুনীর্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।’
এছাড়াও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ব্যাপক স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধেও নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে এক আন্দোলনকারী বলে, ‘দেশের পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে আমাদের মতো তরুণদের নিজ দেশে থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই। আমাদের দাবি ও আশা হচ্ছে দেশে শান্তি ফিরে আসুক ও দুনীর্তি দূর হোক, যেন আমরা সত্যিকার অর্থে এখানে কাজ করতে পারি এবং যারা দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা ফিরে আসতে পারে।’
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলিকে নিয়েও ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তরুণরা। এক্ষেত্রে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর আগ্রাসী আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা।
এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে লাউডস্পিকারে আন্দোলনকারীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হলে উল্টো তাদেরকে ‘সরকারের খুনিদের শাস্তি দাও! শিশু হত্যা বন্ধ কর!’ এ স্লোগান দিতে শোনা গেছে।
এ সময় নারায়ণ আচার্য নামের এক আন্দোলনকারী বলে, ‘আমরা এখানে এসেছি কারণ আমাদের তরুণদের, আমাদের বন্ধুদের হত্যা করা হয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না এর সুবিচার হবে এবং বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা হবে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।'
অপর এক আন্দোলনকারী দুর্গানাহ দাহাল বলে, ‘যতদিন এ সরকার ক্ষমতায় থাকবে, আমাদের মতো মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। গতকাল তারা অনেক তরুণকে হত্যা করেছে, যাদের পুরো জীবনটাই সামনে পড়ে ছিলো। এভাবে তারা নির্দি্বধায় আমাদের মেরে ফেলতে পারবে। তাই, এ সরকারের শেষ না দেখে আমরা থামবো না।’
এদিকে, পদত্যাগ করার আগে আজ সকালে নেপালের সব রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী অলি। এতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো প্রকার সংঘাত-সংঘর্ষের পক্ষে নই। যেকোনো সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় আগ্রহী।’
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে নেপালের ১৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করেন কেপি শার্মা অলি। ২০০৮ সাল থেকে তিনি দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। তবে, আজ তার পদত্যাগের আগে নৈতিক কারণে গতকাল আরও দু’জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।