অন্যান্য

চীনের দক্ষিণে আঘাত হেনেছে সুপার টাইফুন রাগাসা

তাইওয়ানে নিহত ১৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫;  আপডেট: ২৩:২৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীনের দক্ষিণে আঘাত হেনেছে সুপার টাইফুন রাগাসা

প্রচণ্ড বাতাসে হংকংয়ের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে। ছবি : বিবিসি।

চীনের দক্ষিণাংশে আঘাত হেনেছে সুপার টাইফুন রাগাসা। আজ বুধবার স্থানীয় সময় বিকালে দেশটির দক্ষিণাংশের বাণিজ্যিক নগরী হংকংয়ে আছড়ে পড়ে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়টি। এ সময় ক্যাটাগরি তিন মাত্রার হ্যারিকেনের সমান শক্তিশালী এ ঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার। 

এ সময় প্রচণ্ড বাতাসে শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়াসহ বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে, আগাম সতর্কতা হিসেবে এরইমধ্যে এ অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। 

এর আগে গত সোম ও মঙ্গলবার চলতি বছরের এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করেছে ফিলিপাইনের একটি দ্বীপসহ তাইওয়ানের পাহাড়ি এলাকা। 

গত সোমবার ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার হ্যারিকেনের সমান শক্তি নিয়ে ফিলিপাইনের উত্তরাংশে আঘাত করে রাগাসা। এ সময় ফিলিপাইনের লুজোন উপকূলে নৌকাডুবে ৭ জেলে নিহত হয়। 

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তাইওয়ানে একটি লেকের প্রাকৃতিক বাঁধ ভেঙ্গে ৬ কোটি ৮০ লাখ টন পানি লোকালয়ে ঢুকে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ সময় রাস্তায় থাকা গাড়ি পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে। ডুবে গেছে বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘরের নিচতলাগুলো। একইসঙ্গে, প্রচণ্ড পানির স্রোতে একটি সেতুও ভেসে যেতে দেখা যায়। 

তাইওয়ানে ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় রাস্তায় থাকা গাড়ি ভেসে যায়। ছবি : বিবিসি।

এ অবস্থায় তাইওয়ানে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও ১৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে এবং তাদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে, হ্যারিকেনের মতো শক্তিশালী বাতাসে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে ভূমিধস ও বড় বড় ঢেউয়ের কারণে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ সময় বাসিন্দাদের উদ্ধারে কর্মীদের তৎপরতা দেখা যায়। তবে, গতকাল মঙ্গলবার রাতেই ১৮ লাখ ৯০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে প্রাদেশিক জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা থেকে জানানো হয়।

একইসঙ্গে, ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করতে গুয়াংডংয়ে ১০ হাজারেরও বেশি নৌকা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় জরুরি উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ৩৮ হাজারেরও বেশি অগ্নিনির্বাপক কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো বলে রাষ্ট্রয়ত্ত্ব সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়। 

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে হংকংয়ের সমুদ্র তীরবর্তী ওশান পার্ক হোটেলের লবি প্রচণ্ড পানির স্রোতে ভেসে যেতে দেখা গেছে। এ সময় লবিতে থাকা অনেকেই পানির স্রোতের সঙ্গে ভেসে যায়। 

কিন্তু, এতে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি বলে হোটেলটির তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, কর্তৃপক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে জরুরি সেবা পৌঁছানো হয়েছে বলেও নিশ্চিত করা হয়। 

প্রচণ্ড বাতাসে হংকংয়ের রাস্তায় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা এক পথচারীর। ছবি : সিএনএন।

তবে, সুপার টাইফুন রাগাসার আঘাতে পুরো হংকংজুড়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮৮৫ জনকে অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সরকার থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। 

এদিকে, প্রচণ্ড শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড় থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করতে আগেই হংকং ও ম্যাকাওয়ে সর্বোচ্চ হ্যারিকেনের সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়। এর অংশ হিসেবে ৮০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার এ শহর দুটির সব স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহনসহ বিমানবন্দরগুলোও বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। 

এছাড়া, ম্যাকাওয়ের পাশের উপকূলীয় শহর জুহাইয়ের বাসিন্দাদের গতকাল বিকালেই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। এ সময় অনেকেই আত্মীয়দের বাড়ি, হোটেল বা স্কুলের জিমনেশিয়ামের মতো অস্থায়ী সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়।

তবে, চীনের গুরুত্বপূর্ণ এ শহরগুলো প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে বলে এগুলোর অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধী করে নির্মাণ করা। ফলে, শক্তিশালী ঝড়ের কবলে পড়লেও ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হতে দেখা যায়। 

উল্লেখ্য, এরইমধ্যে ফিলিপাইনে ওপং নামে আরেকটি শক্তিশালী ঝড় তৈরি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর, এখনও অঞ্চলগুলোতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বিরাজমান থাকায় সামনে এ ধরনের আরও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। 

সূত্র : সিএনএন।