জ্যামাইকায় হ্যারিকেন মেলিসার তাণ্ডব
পুরো দেশকে ‘দুর্যোগপূর্ণ এলাকা’ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৯ অক্টোবর ২০২৫; আপডেট: ২৩:০৭, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড জ্যামাইকার উপকূলীয় এলাকা। ছবি : আল-জাজিরা।
জ্যামাইকাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্্রু হোলনেস। প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মেলিসা ক্যারিবীয় দ্বীপটিতে তাণ্ডব চালানোর পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দেশটিতে এ যাবৎকালের মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ এ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো দ্বীপ।
গতকাল মঙ্গলবার ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার শক্তি নিয়ে জ্যামাইকায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাসাবাড়ির ছাদ উপড়ে পড়ে, পুরো এলাকা ভেসে যায় প্রবল বন্যায় এবং ভেঙ্গে যায় বড় বড় গাছসহ বিদ্যুতের খুঁটিও। এ অবস্থায় বর্তমানে প্রায় ২৮ লাখ বাসিন্দা বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
টানা কয়েক ঘণ্টা জ্যামাইকায় তাণ্ডব চালায় হ্যারিকেন মেলিসা। ভূমির উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় এর বাতাসের গতিবেগ একসময় কমে গিয়ে তা ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। পরবর্তীতে তা আবারও শক্তি অর্জন করে এবং আজ বুধবার আঘাত হানে প্বার্শবর্তী দেশ কিউবায়।

মেলিসার তাণ্ডবের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পর পর বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন প্রধানমন্ত্রী হোলনেস। শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশজুড়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে দ্রুত উদ্ধার পেতে দেশকে ‘দুর্যোগপূর্ণ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে গতকাল সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ যেখানে আঘাত করেছে, সেখানকার পরিস্থিতি মারাত্মক। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যে তথ্য এসেছে তাতে আমরা জানতে পেরেছি যে হাসপাতালসহ আবাসিক, বাণিজ্যিক- সব ধরনের এলাকা এবং আমাদের রাস্তাঘাটের মতো অবকাঠামোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এ মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু, ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার হ্যারিকেন যেখানে আঘাত করে সেখানে হতাহতের কিছু ঘটনা ঘটবে বলেই আশঙ্কা করছি।’

এ অবস্থায় আজ বুধবার সকাল থেকেই তার সরকার যত দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো ও উদ্ধার কাজ শুরু করা যায়, সে তৎপরতা শুরু করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
তবে, ঘূর্ণিঝড়টি পুরো শক্তি নিয়ে আঘাত করার আগেই এর প্রভাবে জ্যামাইকায় ৭, হাইতিতে ২৫ ও ডোমিনিকান রিপাবলিকে ১ জন নিহত হয়।
এদিকে, জ্যামাইকা ও কিউবার মতো দেশগুলো প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। কিন্তু, বিশ্বব্যাপী ঘটে চলা জলবায়ু পরিবর্তজনিত কারণে ঘূর্ণিঝড়গুলো বর্তমানে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেছে।

এ অবস্থায় পরিবর্তিত এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে বিশ্বের বিত্তশালী দেশগুলোকে জলবায়ু খাতে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী হোলনেস।
সে সময় তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন কোনো দূরবর্তী হুমকী বা বইয়ের কোনো তত্ত্ব নয়। এটি এখন জ্যামাইকার মতো ছোট, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দৈনন্দিন প্রতিকূল ঘটনা হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড রির্সোস ইন্সটিটিউটের মতে, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী, তার মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য দুই শতাংশ নিঃসরণ করে জ্যামাইকা। কিন্তু, অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপের মতোই এটি প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা প্রতিকূল আবহাওয়ার ভয়াবহ শিকার হয়ে আসছে।
সূত্র : আল-জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি।



