রাজনীতি

পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ জন নিহত

ভারত ও আফগানিস্তানকে দায়ী করছে দেশটি

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১১ নভেম্বর ২০২৫;  আপডেট: ২২:৪৯, ১১ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ জন নিহত

এখনও পর্যন্ত কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার শহরটির আদালতের প্রবেশমুখে সংঘটিত এ হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ২৭ জন। এ হামলার জন্য ভারত ও আফগানিস্তানকে দায়ী করছে পাকিস্তান।

ইসলামাবাদে আদালতের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় বলে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি জানান। এ সময় হামলাকারীরা আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তারপর তারা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুুলিশের গাড়িটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় বলে মন্ত্রী জানান। 

সাপ্তাহিক কার্যদিবস হওয়ায় এ সময় আদালতের সামনে প্রচুর মানুষের ভীড় ছিলো। হতাহতদের অধিকাংশই আদালতে আসা ব্যক্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলার ঘটনার নিন্দা জানানোসহ হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে নিহতদের প্রতি সকল স্তরের মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, এ ঘটনাসহ পাকিস্তানের একটি ক্যাডেট কলেজে হামলা চেষ্টার ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তবে, তার দাবির ক্ষেত্রে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ করেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সারা বিশ্বের সময় এসেছে ভারতের এ ধরনের চক্রান্তমূলক আচরণের প্রতিবাদ করার।’

এদিকে, ঘটনার পর পরই হামলাস্থলে তদন্ত কাজ শুরু করেছে গোয়েন্দারা। ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর হামলা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে তদন্ত কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের সহকারী কমিশনার রাজা বানথিয়া।

তবে, এখনও পর্যন্ত কোনো দেশ বা জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু, এ হামলার ঘটনায় আফগানিস্তানকে দায়ী করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। বর্তমানে দেশে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ বিরাজ করছে এবং এখনই ‘সতর্ক হওয়ার সময়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দিল্লির লাল কেল্লার সামনে একটি গাড়ি থেকে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ছবি : ডয়চে ভেলে।

এ অবস্থায় কাবুলের সঙ্গে সফল আলোচনার আর কোনো আশা নেই বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। আজ ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আফগানিস্তানের এটা বুঝতে হবে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে যদি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী আমাদের দেশে হামলা চালায় তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী শান্তিচুক্তি কখনোই সম্ভব নয়। ইসলামাবাদের এ ঘটনা কাবুলের তরফ থেকে একটি বার্তা, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে যার পরিপূর্ণ জবাব দেওয়া ক্ষমতা আমাদের আছে।’

তবে, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক এ মন্তব্য সম্পর্কে এখনও পাল্টা কোনো জবাব দেয়নি আফগানিস্তান।

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার তাদের দেশ থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামের জঙ্গিগোষ্ঠীকে পাকিস্তানে হামলা চালাতে মদদ দেয় বলে অভিযোগ করে আসছে দেশটি। তবে, বরাবরই পাকিস্তানের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আফগানিস্তান।

এদিকে, গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি গাড়িবোমা হামলার ঘটনা ঘটে। নগরীর ঐতিহাসিক লাল কেল্লার প্বার্শবর্তী মেট্রো স্টেশনের সামনে সংঘটিত এ হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঘটনার পর পরই মেট্রো স্টেশনসহ আগামী তিনদিনের জন্য লাল কেল্লা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে, দেশটির কর্ণাটক, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে জারি করা হয় সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা।

হামলার কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু জানা গেলেও এ সংক্রান্ত তদন্ত কাজ শুরু করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। এক্ষেত্রে, তাদেরকে বৈআইনি কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত আইন এবং সন্ত্রাস-বিরোধী আইনের আওতায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর ভিত্তিতে সংস্থাটি এখন ব্যাপক পরিসরে এ ঘটনার তদন্তকাজ সম্পন্ন করার সুযোগ পাবে।

এদিকে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না বলে সতর্ক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বর্তমানে ভুটান সফরে থাকা মোদি বলেন যে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বিস্তৃত পরিসরে কাজ শুরু করেছে এবং আশা করা হচ্ছে যে এ হামলার আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।
  
সূত্র: আল-জাজিরা ও ডয়চে ভেলে।