ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি
সেনা মহড়ার ঘোষণা ভেনেজুয়েলার
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১২ নভেম্বর ২০২৫; আপডেট: ২৩:২১, ১২ নভেম্বর ২০২৫
বলিভারিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী মূলত ভেনেজুয়েলার রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা সেনাবাহিনীসহ অস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বড় আকারের সামরিক মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে। ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতির পাল্টা জবাব হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি।
এর অংশ হিসেবে আজ বুধবার দিনব্যাপী ভেনেজুয়েলার স্থল, নৌ ও আকাশপথে সেনাসদস্যদের মহড়া অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির প্যাদরিনো লোপেজ জানান। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সামাজ্রবাদী হুমকী’ মোকাবেলায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
একইসঙ্গে, নিয়মিত সেনাসদস্যদের সঙ্গে এ মহড়ায় বলিভারিয়ান নামের একটি মিলিশিয়া বাহিনীও অংশ নিবে। এ বাহিনী মূলত ভেনেজুয়েলার রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করে। দেশটির প্রয়াত নেতা হুগো শাভেজ বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে এ বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। এ বাহিনীর নামকরণ করা হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার বিপ্লবী নেতা সিমোন বলিভারের নামে। তিনি এক সময় স্পেনের দখলদারিত্ব থেকে লাতিন আমেরিকার বহু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশ পাওয়ার পরই এ সেনা মহড়া শুরু হয় বলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাদরিনো লোপেজ জানান। ‘আদেশ, নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি’ এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরালো করাই এর উদ্দেশ্যে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একইসঙ্গে, এটি মাদুরোর ‘স্বাধীনতা পরিকল্পনা ২০০’ - নামের বিস্তৃত পরিসরে বেসামরিক-সামরিক কৌশলের অংশ বলে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বার্তায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান। মূলত, দেশ রক্ষায় একইসঙ্গে দেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলিশিয়া ও পুলিশের সম্বন্বয় ঘটিয়ে শক্তি বৃদ্ধি ও প্রদর্শনই এর উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়।
তবে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত সেনা উপস্থিতি বাড়িয়ে চলায় দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনাও ক্রমাগত বাড়ছে। এর অংশ হিসেবেই ভেনেজুয়েলা মূলত এ মহড়ার আয়োজন করেছে।
এদিকে, 'দক্ষিণাংশের অভিযান পরিচালনাকারী' এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বড়চেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে বলে গতকাল নৌবাহিনী ঘোষণা দেয়। এ অংশটির অধিকাংশ লাতিন আমেরিকার প্বার্শবর্তী এলাকা।

গত মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব ইউরোপ থেকে ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড নামের এ যুদ্ধ জাহাজটি ক্যারিবীয় সাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে বর্তমানে ওই অঞ্চলে প্রায় ১৫ হাজারের মতো মার্কিন সেনা উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, এ অঞ্চলের মাদক চোরাচালান বন্ধে এবং যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির তরফ থেকে দাবি করা হয়। এর অংশ হিসেবে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌকায় অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু, মূলত ভেনেজুয়েলায় সরকার পতনের প্রস্তুতি হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকাসংলগ্ন জলসীমায় তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলেছে বলে বিশ্বাস করে কারাকাস। এক্ষেত্রে, মাদুরোকে উৎখাতই তাদের মূল উদ্দেশ্যে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাম্প প্রশাসনেরই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ফোর্ড পৌঁছানোর বেশ কিছুদিন আগেই আরও বেশ কয়েকটি রণতরীসহ সাড়ে চার হাজারেরও বেশি নৌ ও সেনাসদস্য এ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে - গাইডেড মিসাইল ধ্বংসীকারী অস্ত্র, সাবমেরিন, গাইডেড মিসাইল বহনকারী জাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী জাহাজ।
এছাড়া, দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ পুয়ের্তে রিকোতে ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্যারিবীয় অঞ্চলে শক্তি বাড়ানোর সময় থেকেই লাতিন আমেরিকার এ দেশটি মার্কিন সেনাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এর অংশ হিসেবে এরইমধ্যে এ দ্বীপ দেশটিতে এমকিউ - ৯ নামের কমপক্ষে তিনটি ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে বলে রয়টার্স থেকে জানানো হয়।
একইসঙ্গে, বর্তমানে পুয়ের্তে রিকোতে প্রায় ৫ হাজারের মতো মার্কিন সেনা উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, এর মধ্যে বেশ কয়েকবার ভেনেজুয়েলার উপকূলঘেঁষে বেশ কয়েকটি মার্কিন বোমারু বিমান উড়ে যেতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত অক্টোবরের শেষের দিকে একটি বোমারু বিমান হামলার মহড়াও দেয়।
সূত্র : সিএনএন।



