জলবায়ু

চরমাভাবাপন্ন আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব

বিশ্বজুড়ে `আগাম সতর্কীকরণ` ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বারোপ জাতিসংঘের

জলবায়ু ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২০ অক্টোবর ২০২৫;  আপডেট: ০০:৩১, ২১ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে `আগাম সতর্কীকরণ` ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বারোপ জাতিসংঘের

চলতি বছর প্রচণ্ড দাবদাহে সৃষ্ট দাবানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় গ্রিস।

বিশ্বজুড়ে বর্তমানে বিরাজ করছে চরমভাবাপন্ন অবস্থা। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত - সব ঋতুতেই প্রকৃতি হয়ে উঠছে প্রচণ্ড বৈরি। কিন্তু, বৈরি এ আবহাওয়া সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই নেই আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, যা সে সমস্ত দেশের জনগণের জীবনকে করে তুলছে আরও সংকটাপন্ন। বিশেষ করে, এর সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বর্তমানে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো। 

আর, এ অবস্থায় বৈরি এ আবহাওয়া মোকাবেলায় আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে জাতিসংঘ। বিশ্বের দেশগুলোকে সচেতন করতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটির বিশ্ব আবহাওয়া প্রতিষ্ঠান (ডব্লিউএমও)। 

আজ সোমবার প্রকাশিত ডব্লিউএমও এর এ সংক্রান্ত নতুন প্রতিবেদনে বৈশ্বিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রকাশ সংক্রান্ত নেটওয়ার্কের মধ্যে বিদ্যমান বড় ধরনের অসমতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়ার চরমভাবাপন্ন অবস্থায় মানুষের জানমালের ক্ষতি এড়াতে সঠিক সময়ে আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কবার্তার প্রয়োজনীয়তায় জোর দেওয়া হয়েছে। 

একইসঙ্গে আজ জেনেভায় শুরু হয়েছে জাতিসংঘের এ প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক সম্মেলন। এতে ডব্লিউএমও এর মহাসচিব সেলেস্তে সৌলো বলেন, ‘আগাম সতর্কবার্তা মানে আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু বিশ্ববাসীকে সতর্ক করা নয় বরং তাদের ক্ষমতায়ন।’ 

সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অব হোম অ্যাফেয়ার্সের প্রধান বাওমে স্নাইডার সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের বলেন যে, বর্তমানে বিশ্বের কোনো দেশই জলবায়ু পরিবর্তন ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। 

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ছে পাকিস্তান।

এ অবস্থায় প্রতিকূল ও বৈরি অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর আগাম সতর্কবার্তা ও আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাসের গুরুত্ব তুলে ধরতে চলতি বছরের একটি ঘটনার উদাহরণ দেন তিনি। 

স্নাইডার বলেন যে, গত মে মাসে পাহাড়ের হিমবাহ ধসে পড়া নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা সম্ভব হয়েছিলো। মূলত, হিমবাহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের কারণেই সে সময় আগেভাগেই ব্লাটেন নামের একটি সুইস গ্রাম খালি করে ফেলা হয় এবং ধসে পড়া হিমবাম থেকে বহু লোকের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়। 

চরমাভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে হিমবাহ গলার প্রবণতা বাড়ছে বলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি বলে জানান তিনি। 

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত আগাম সতর্কবার্তার ঘাটতি থাকা দেশগুলোতে বর্তমানে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্পর্কিত মৃত্যুহার আগের তুলনায় ছয়গুণ বেড়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমও এ বিষয়ে আরও বলে, ‘বর্তমানে লাখ লাখ মানুষ বিপদজনক আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত, যার ক্রমাগত নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর ক্ষেত্রে।’ 

আবহাওয়া, পানি ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিপদজনক পরিস্থিতির কারণে গত ৫০ বছরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে জানানো হয়। এ মৃত্যুর ৯০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সংঘটিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করে তারা। আর, আবহাওয়ার চরমভাবাপন্ন অবস্থা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এ মৃত্যুহারও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বলে বিবৃতিতে সতর্ক করা হয়। 

ক্রমাগত ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে নাইজেরিয়া।

তবে, নিরাশার মধ্যে কিছু আশার বার্তা দিয়েছে ডব্লিউএমও। তারা জানিয়েছে, গত দশকে বেশ কিছু দেশে জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার ‘ব্যাপক অগ্রগতি’ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে, কিছু দেশের আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নানা ধরনের উপকরণের সংখ্যা ৫২ থেকে বেড়ে ১০৮টিতে উন্নীত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তবে, বিশ্বের ৬২টি দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এর মধ্যে অর্ধেকের এ সংক্রান্ত একদম প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা এবং ১৬ শতাংশের তাও নেই বলে ডব্লিউএমও জানায়। প্রতিষ্ঠানটি বলে, ‘সংঘাত-সহিংসতা বিরাজমান, এমন ভঙ্গুর দেশগুলোতে অবস্থা ভয়াবহ।’ 

তারপরও, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ এ ক্ষেত্রে কার্যকর ওয়েবসাইট ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত মানসম্মত ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়ানোর মধ্য দিয়ে অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানানো হয়। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরই আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ব। এ পর্যন্ত ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো। বিপর্যয়কর দাবানলের শিকার হয়েছে দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

সূত্র : আল-জাজিরা।