নেপালে সরকার পতন
দুর্নীতি নির্মূলের অঙ্গীকার নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩:২০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের আগে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি : আল-জাজিরা।
নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি দেশটি থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া পূরণের অঙ্গীকার করেছেন। একইসঙ্গে দেশ পুনর্গঠনে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার এবং সহযোগিতা করারও আহ্বন জানান তিনি। আজ রবিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নেপালের সাবেক এ প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
নেপালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সরকার পতনের পর নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন তিনি। ‘জেন-জি’দের এ আন্দোলনে কমপক্ষে ৭২ জন নিহত ও আরও প্রায় ১৯১ জন আহত হয়।
এদিকে, গত শুক্রবার দায়িত্ব নেওয়ার পর আজই প্রথমবারের মতো নেপালের জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এতে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন জে-জি প্রজন্মের চাহিদার ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন। এ প্রজন্ম চায় দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হোক, দেশে উন্নতমানের সরকার ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। এখন আমাদের উচিত তাদের এ চাহিদা বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।’
আন্দোলনকারী নেতারা প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে টানা কয়েকদিনের আলোচনার পর কার্কিকে নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন।
বিষয়টির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতে আমাকে এ দায়িত্ব নিতে হয়েছে, তা আমি আসলে কখনোই চায়নি। আন্দোলনকারীদের সম্মতির ভিত্তিতে আমি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
তবে, খুব বেশিদিন এ দায়িত্বে থাকবেন না এবং খুব শিগগিরই পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি এ বিষয়ে বলেন, ‘কোনোভাবেই আমরা ছয় মাসের বেশি এ দায়িত্বে থাকবো না। এ সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করে পরবর্তী সংসদ ও মন্ত্রীদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাই।’
এ অবস্থায় এরইমধ্যে নেপালের সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাওদেল। একইসঙ্গে, বর্তমান নতুন প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী বছরের ৫ মার্চ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি উৎখাত হওয়া নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা অলির নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে দেশটিতে মূলত এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তা তীব্র আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে আন্দোলন দমাতে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ গুলি ছুঁড়লে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
শেষ পর্যন্ত তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী অলিসহ তার সংসদের অন্যান্য মন্ত্রীরা। এ সময় দেশটির সংসদ ভবনসহ অন্যান্য মন্ত্রীর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে নিহত হন প্রধানমন্ত্রী অলির স্ত্রী।
তবে, প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাতের পরও দেশটির অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে জে-জিন প্রজন্ম। একইসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমাগত আলোচনার ভিত্তিতে সুশীলা কার্কিকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে তারা।
উল্লেখ্য, নেপালে দীর্ঘ এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে অবসান হয় রাজতন্ত্রের। এর পর বর্তমান এ আন্দোলনই ছিলো দেশটিতে সবার্ধিক রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক কোনো অসন্তোষ বা বিক্ষোভের ঘটনা।
সূত্র : ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরা।