অর্থ ও বাণিজ্য

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন বিল প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে

অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২;  আপডেট: ০১:৪৭, ২৯ অক্টোবর ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন বিল প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে

নতুন এ আইন প্রয়োগ হলে কারখানার কাজের পরিবেশ উন্নত হবে। ছবি : ইউএনবি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্ক তৈরি পোশাক ও জুতা শিল্পের জন্য নতুন একটি আইনের খসড়া উত্থাপন করেছে। 'দ্য ফ্যাশন সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট' নামে নতুন এ বিল শিগগিরই আইন আকারে পাস হতে পারে। পাস হলে এ আইন বিশ্বের তৈরি পোশাক ও জুতাশিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের মানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্বের ফ্যাশন বাজারের বড় গন্তব্য নিউইয়র্কের উত্থাপন করা এ আইনের খসড়ায় অনেকগুলো নির্দেশনা রাখা হয়েছে। এসব নির্দেশনা অনুযায়ী, গার্মেন্টস মালিকদের তাদের পোশাক তৈরির কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে তৈরি পণ্য বিশ্ববাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের যথাযথ তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এজন্য কাজের পরিবেশের মান, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, কারখানার কার্বন নিঃসরণ মাত্রা, শিশুশ্রমের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

আইন আকারে পাস হওয়ার পর নিউইয়র্কে ব্যবসা করতে আগ্রহী এমন ১০০ মিলিয়ন ডলার আয়কারী যে-কোনো পোশাক ও জুতা তৈরির প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে। অঙ্গরাজ্যটির সিনেটর আলেসান্দ্রা বিয়াজ্জি ও অ্যাসেম্বলিওমেন আনা আর কেলিস এ বিলটি উত্থাপন করেন। নিউইয়র্কভিত্তিক ফ্যাশন শিল্পের একটি শক্তিশালী জোট এ আইনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে বলেও জানা গেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিয়াজ্জি বলেছেন, 'নতুন এ আইন বাস্তবায়িত হলে কারখানাগুলোতে শ্রম ও মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং কাজের পরিবেশ রক্ষার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলেই আমরা আশা করছি।'

নতুন এ আইনের আওতায় কাঁচামাল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে তা কারখানায় পৌঁছানো এবং প্রক্রিয়াজাত হয়ে রফতানি করা পর্যন্ত সব তথ্যই বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এরপর নিশ্চিত করতে হবে পুরো প্রক্রিয়াটির সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব। এ ক্ষেত্রে কারখানার কাজের পরিবেশ, শ্রমিকদের নায্য বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ, পানি ও রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা এবং সর্বোপরি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ মাত্রা (এ ক্ষেত্রে তা অবশ্যই প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি হওয়া যাবে না), সবই প্রকাশ করতে হবে।

কারখানাগুলোকে পুরো প্রক্রিয়াটি সাজাতে ও প্রকাশ করতে যথাক্রমে ১২ ও ১৮ মাস সময় দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বাৎসরিক আয়ের ওপর ২ শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে, নতুন এ আইন মেনে চলা কঠিন না হলেও এটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা। তবে পণ্যের নায্য দাম দেওয়া হলে এ খরচ পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি ফারুক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, 'খসড়া আইনটি পাস হওয়ার পর তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কী ধরনের প্রভাব রাখবে, তা এখনই অনুধাবন করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তা খুব বড় ধরনের নেতিবাচক কোনো প্রভাব না রাখলেও কারখানাগুলোর খরচের মাত্রা বেড়ে যাবে নিঃসন্দেহে।'

তবে এ আইনের প্রয়োগ শুরু হওয়ার কারখানাগুলোর খরচ বাড়লেও তা মেটানোর প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ জানান। তার মতে, ক্রেতারা সবসময়ই কম দামে পণ্য কেনার চেষ্টা করেন। ফলে, খসড়া এ আইনে একই সঙ্গে রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য যুক্তিসঙ্গত একটি নির্দেশনা থাকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অবশ্য এ আইন পাস ও প্রয়োগ হলে এ শিল্পে খরচের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তা এ খাতকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে বলেই আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইংল্যান্ড ও জার্মানির মতো ইউরোপের বিভিন্ন দেশও পোশাক ও জুতা কারখানার সার্বিক পরিবেশসহ শ্রমিকদের মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন আইন পাস করছে। সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।