অন্যান্য

জাপানে সুপার টাইফুন নানমাদুল : ৯ মিলিয়ন বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে আহ্বান

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০০:১১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২;  আপডেট: ০১:০৮, ২৯ অক্টোবর ২০২২

জাপানে সুপার টাইফুন নানমাদুল : ৯ মিলিয়ন বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে আহ্বান

কিয়ুশুতে ভূমিধসের পর উদ্ধার তৎপরতা। ছবি : রয়টার্স।

জাপানে আঘাত হানা সুপার টাইফুন নানমাদুলের কারণে গতকাল সোমবার দেশটির প্রায় ৯ মিলিয়ন বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত রবিবার দেশটির প্রধান চারটি দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষিণের কিয়ুশু দ্বীপে প্রথম আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। জাপানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ পর্যন্ত দুজন নিহত ও ৯০ জন আহত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়টি শিগগিরই দেশটির সবচেয়ে বড় দ্বীপ হোনশুতে আঘাত হানতে যাচ্ছে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশটিতে পাঁচ মাত্রার সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে যা জাপানের দুর্যোগ সতর্কতাবার্তার সর্বোচ্চ মাত্রা। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর প্রথমে চার মাত্রার সতর্কবার্তা জারি করা হয় এবং ওই সময় কিয়ুশুর কিছু অংশসহ দেশটির আরো কয়েকটি এলাকার প্রায় ৯ মিলিয়ন বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত তার বর্তমান নিউইয়র্ক সফর স্থগিত করেছেন বলে জানা গেছে। সেখানে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ সভায় তার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

জাপানে রবিবার ঘূর্ণিঝড়টি প্রথম আঘাত হানার পর কয়েক হাজার বাসিন্দা জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাতে বাধ্য হন। প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজারের মতো বাসিন্দা বর্তমানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ দেশটিতে ব্যাপক আকারে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় নানমাদুলের কারণে বর্তমানে জাপানে ঘণ্টায় ২৩৪ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে এবং দেশটির কিছু কিছু অংশে ৪০০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এরই মধ্যে দেশটির বুলেট ট্রেন, ফেরি ও কয়েক শত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকা রক্ষায় বালুর ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রবিবার দেশটির কাগোশিমা শহরের কাছাকাছি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরের ছাদ ও বিলবোর্ড উড়ে যেতে দেখা যায়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানিতে গাড়ি ডুবে একজন এবং ভূমিধসের কারণে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে। এ ছাড়া আরো একজন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়াসহ ৮৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

আগামী বুধবার সাগরে মিলিয়ে যাওয়ার আগে প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব দিকে বাঁক নেবে এবং জাপানের হোনশু দ্বীপ অতিক্রম করবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশটির রাজধানী টোকিওতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় নানমাদুলের কারণে বর্তমানে জাপানে ঘণ্টায় ২৩৪ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যাচ্ছে এবং দেশটির কিছু কিছু অংশে ৪০০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইউএস জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের (জেটিডব্লিউসি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নানমাদুলকে 'সুপার টাইফুন' অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটি চার বা পাঁচ মাত্রার হারিকেনের সমতুল্য।

সমুদ্র অঞ্চলের আবহাওয়ার বিশেষ এক অবস্থা লা নিনার প্রভাবে চলতি বছর এ ধরনের সক্রিয় অনেক হারিকেনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে এ ধরনের প্রবল মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়বে বলেও সতর্ক করেছে দ্য ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)।

সূত্র : বিবিসি।