শিল্প-সাহিত্য-বিনোদন

বিশ্বসেরা স্থাপত্যের পুরস্কার জিতলো সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল

শিল্প-সাহিত্য-বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২২;  আপডেট: ০২:০৫, ২৯ অক্টোবর ২০২২

বিশ্বসেরা স্থাপত্যের পুরস্কার জিতলো সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল

প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার জনগোষ্ঠীর সেবায় এ হাসপাতাল ভূমিকা রাখবে। ছবি : সিএনএন।

বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় নবনির্মিত একটি হাসপাতাল ভবন বিশ্বসেরা স্থাপত্য হিসেবে 'আরআইবিএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ২০২১' জিতেছে। দ্য রয়েল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (আরআইবিএ) সম্মানজনক এ পুরস্কার প্রদান করে। মঙ্গলবার এ পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে সংস্থাটি। এ সময় আরআইবিএ কর্তৃপক্ষ 'সেবা ও মানবিকতাকে বুকে ধারণ করে' হাসপাতালটির নকশা করায় এর স্থপতিদের প্রশংসা করে।

দেশের দক্ষিণে অবস্থিত সাইক্লোনপ্রবণ জেলা সাতক্ষীরায় ৮০ শয্যার এ হাসপাতাল নির্মাণ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান 'ফ্রেন্ডশিপ'। এর নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ চৌধুরী ও তার ঢাকাভিত্তিক স্থাপত্য সংস্থা আরবানা।

এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের অনুভূতি জানিয়ে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী বলেন, 'এই অর্জন অবশ্যই আমাদেরকে এ ধরনের কাজের প্রতি আরও উৎসাহী করবে বলে আমি আশাবাদী। সম্পদ ও অর্থের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও বর্তমানে পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে মানবজাতি ও প্রকৃতি রক্ষায় আমাদের সমন্বিতভাবে এ ধরনের আরও কাজ করতে হবে।'

স্থানীয়ভাবে তৈরি ইট দিয়ে নির্মিত এ ভবনটি ঘিরে রয়েছে নিরিবিলি উঠান, ছায়াঘেরা পায়ে চলার পথ। ভবনটির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা খাল হাসপাতালের মূল দুটি ভবনকে আলাদা করেছে। চারপাশের প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি এ হাসপাতাল রোগী থেকে শুরু করে ডাক্তারসহ এখানে আসা যে-কারও জন্যই একটি স্বস্তির অনুভূতি দেবে বলে আরআইবি মন্তব্য করেছে।

প্রতি দুবছর পর পর চমকপ্রদ নকশা ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে সক্ষম ভবন বা অবকাঠামোকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত সাতক্ষরীর যে এলাকায় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানকার পরিবেশ এতোটাই বৈরি যে এখানে ধানের জমিকে চিংড়ির ঘেরে পরিণত করা হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা চিংড়ি চাষে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।

প্রতিকূল এ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে এ ধরনের পরিবেশবান্ধব একটি অবকাঠামো নির্মাণের প্রশংসা করেছে আরআইবিএ। কারণ, ভবনটিতে তৈরি করা উঠানগুলোর কারণে পুরো হাসপাতাল প্রাকৃতিকভাবে বায়ু চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠেছে। এ কারণে এসব ভবনে কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। এ ছাড়া স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানটির করা নকশার কারণে এখানে বৃষ্টির পানি জমে না থেকে বরং তৈরি করা খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। এ পানি প্রবাহিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট জলাধারে জমা হবে যা আবার পরে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা সম্ভব যাবে।

ফরাসি স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ও পুরস্কারের জুরিবোর্ডের প্রধান ওডিল ডেক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করেছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিবেশগত যে বিপর্যয় বা পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে এবং এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে যে অসমতা দেখা যাচ্ছে, এ অবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার জনগোষ্ঠীর সেবায় এ হাসপাতাল ভূমিকা রাখবে।

ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত জুরিবোর্ড এ পুরস্কারের জন্য বিজয়ী নির্বাচন করে থাকেন। এবার ১১টি দেশের ১৬ জন স্থপতির কাজকে পুরস্কারের চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত করা হয়। সেখান থেকে সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালসহ ৩টি কাজ চূড়ান্ত বিচারের জন্য নির্বাচিত হয়। পরে ওই ৩টি নকশার সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বাংলাদেশের এ হাসপাতাল ভবনটিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সূত্র : সিএনএন।