রাজনীতি

ইরানে বিক্ষোভ : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২;  আপডেট: ০০:৪২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

ইরানে বিক্ষোভ : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬

পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নিহত মাহসা আমিনি (ডানে)। ছবি : রয়টার্স।

ইরানে চলমান বিক্ষোভে দেশটির পুলিশের হাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৬ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে গতকাল সোমবার অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর)। দেশটির ১৪টি প্রদেশে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে ৬ জন নারী ও ৪ শিশু রয়েছে বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি। পুলিশি হেফাজতে থাকাবস্থায় নির্যাতনে এক কুর্দি নারীর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে গত ১১ দিন ধরে ইরানে এ বিক্ষোভ চলছে।

এদিকে আন্দোলনকারীদের বিপরীতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করাসহ বিক্ষোভ দমনে গুলিও চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নরওয়েভিত্তিক এ মানবাধিকার সংস্থাটি। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও নিহতদের মৃত্যু সনদ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে দাবি করে সংস্থাটি।

আইএইচআরের পরিচালক মোহাম্মদ আমিরি-মোগহাদ্দাম বলেন, 'বিক্ষোভকারীদের যেভাবে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে তা খুবই ভয়াবহ। তাছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক অপরাধের সমতুল্য। বিশ্ববাসীর অবশ্যই ইরানের জনগণের মৌলিক অধিকারের দাবির সঙ্গে একাত্ম হওয়া উচিত।'

তবে সংস্থাটির এ দাবি নাকচ করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। বরং নিহতের সংখ্যা ৪১ এবং এর মধ্যে পুলিশও রয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের মৃত্যুর জন্যে বিক্ষোভকারীদের দায়ীও করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এক হাজার ২০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ২০ জন সাংবাদিক রয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনি নামের এক নারীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর থেকেই ইরানের ৮০টির বেশি নগর ও শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভ। ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনি ইরানের উত্তর-পশ্চিমের সাকোয়েজ শহর থেকে রাজধানী তেহরানে আসেন। এ সময় হিজাব না পড়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু থানায় নেওয়ার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তিনদিন কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয় তার।

আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু এ অভিযোগ নাকচ করে বরং পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আমিনির পরিবার।

এ ঘটনার পরপরই দেশটির হিজাব সংক্রান্ত কঠোর আইন ও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে ইরানের জনগণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, ইরানের রাস্তায় নেমে আসা নারীরা তাদের মাথার হিজাব আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও নিজেদের মাথার চুল কেটে ফেলাসহ 'নারী, জীবন, স্বাধীনতা' বলে স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় তারা একইসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির বিরুদ্ধে 'স্বৈরশাসক নিপাত যাক' বলেও স্লোগান দেন।

ইরানের শিয়া মুসলিম শাসকদের জন্যে বর্তমানে এ বিক্ষোভ বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইরানের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্যে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন।

সূত্র : বিবিসি।