রাজনীতি

জেরুজালেমে গোলাগুলি : অস্ত্র আইন সহজ করার প্রস্তাব ইসরায়েলের

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২১, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩;  আপডেট: ১৮:২৯, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

জেরুজালেমে গোলাগুলি : অস্ত্র আইন সহজ করার প্রস্তাব ইসরায়েলের

হামলা, পাল্টা হামলায় পশ্চিম তীরে জানুয়ারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক ও জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

ইসরায়েল এর নাগরিকদের অস্ত্র বহনের বিষয়টি সহজ করতে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। গত দুইদিন জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের হামলার জের ধরে গতকাল শনিবার দেশটির সংসদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত শাখায় এ প্রস্তাবটি পাশ করা হয়। আজ রবিবার ইসরায়েলের পুরো সংসদের এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দেওয়ার কথা রয়েছে।

ফিলিস্তিনের কোনো নাগরিক হামলার ঘটনা ঘটালে বা এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার পরিবারের সদস্যদের নাগরিকত্বসহ সামাজিক নিরাপত্তা অধিকার বাতিল করা হবে বলেও প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে এ প্রস্তাব দ্রুত আইন আকারে পাশ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন। একই সময়ে দেশটির সেনাবাহিনী থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরায়েলের বিতর্কিত কট্টোরপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইত্তামার বেন-জিবির বলেন, ‘নাগরিকদের হাতে যখন অস্ত্র থাকবে তখন তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।’

মূলত শনিবার জেরুজালেমে ১৩ বছরের এক ফিলিস্তিনি ছেলে গুলি চালিয়ে এক ইসরায়েলি বাবা-ছেলেকে হত্যার পর পরই এ আইন পাশের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় বলে জানা যায়। তবে এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী দখলকৃত পশ্চিম তীরে হামলা চালিয়ে নয় ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরই মূলত জেরুজালেমে এ পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে শুক্রবার পূর্ব জেরুজালেমের একটি সিনাগগে পৃথক একটি হামলার ঘটনায় সাত ইসরায়েলি নিহত ও আরও প্রায় তিনজন আহত হন। এ ঘটনায় হামলাকারীকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হামলাকারী পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনি নাগরিক ছিলেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ এরইমধ্যে এ হামলার সঙ্গে জড়িত আরও ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সংঘটিত এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা বলেও মন্তব্য করেছে ইসরায়েলের পুলিশ বাহিনী।

এদিকে ফিলিস্তিনের জঙ্গি বাহিনী থেকে এ হামলার প্রশংসা করা হলেও তারা এর দায় স্বীকার করেনি বলে জানা যায়।

এ অবস্থায় নিজ জনগণকে শান্ত থাকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘আমি সব ইসরায়েলি নাগরিককে আবারও বলতে চাই, আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না।’ এ সময় ইসরায়েলকে সমর্থনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।  

দখলকৃত পশ্চিমতীরে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে এসব কিছুরই শুরু মূলত গত বৃহস্পতিবার, যখন দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নয়জন ফিলিস্তিনি নাগরিক ও জঙ্গি নিহত হয়। এর আগে গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়, যার জবাবে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলা, পাল্টা হামলায় পশ্চিম তীরে জানুয়ারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক ও জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনার পর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দেশটির সঙ্গে যৌথ সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত সব চুক্তি বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখলে নেয় ইসরায়েল, একইসঙ্গে পুরো শহরটিকে নিজেদের রাজধানী ঘোষণা করে দেশটি। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ ইসরায়েলের এ দাবির পক্ষে সমর্থন জানায়নি। অন্যদিকে ভবিষ্যতে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী করার আশা পোষণ করে আসছে ফিলিস্তিনও।

সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।