জেনেভায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসমাপ্তি সংক্রান্ত বৈঠক
রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া নিয়ে আবারও জেলেনস্কির হুশিয়ারি
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৭, ২৫ নভেম্বর ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৮, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
খসড়া শান্তি পরিকল্পনায় উল্লেখকৃত ২৮টি বিষয়ের বেশিরভাগই রাশিয়াকে সুবিধা দিবে বলে অভিযোগ করে ইউক্রেন ও দেশটির মিত্র ইইউ’র নেতারা।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শেষ হলো ইউক্রেন-রাশিয়া সম্ভাব্য যুদ্ধসমাপ্তি সংক্রান্ত বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে যুদ্ধসমাপ্তির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে গতকাল সোমবার জাানানো হয়। একইসঙ্গে এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলেও জানায় দেশগুলো।
তবে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিরোধ বা ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ অবস্থায় বেঠকে গৃহীত ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’কে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
কিন্তু, রাশিয়ার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দখলকৃত ভূখণ্ডের আইনি বৈধতা দাবির বিষয়টি শান্তি আলোচনার অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ ইউক্রেনে দেশটির আক্রমণকে বৈধতা দেওয়া, উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি ভূখণ্ডের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের মূলনীতি বিরোধী।’
তবে, বৈঠকের পর এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আশার বাণী শুনিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি লিখেন, ‘হয়তো ভালো একটা কিছু হতে যাচ্ছে।’ যদিও একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে এটিও লিখেন যে, ‘তবে কিছু একটা না হওয়া পর্যন্ত তা বিশ্বাস করা যাবে না।’
এদিকে, এ বৈঠকে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং তারা এখনও বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে অবগত নয় বলে ক্রেমলিন থেকে জানানো হয়। তবে, এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পা তৈরি করা হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কোভ জানান।
এর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা ২৮টি বিষয়সংম্বলিত একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরবর্তীতে, গত সপ্তাহে ইউক্রেনের কাছে এটি উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু, পরিকল্পনায় উল্লেখকৃত ২৮টি বিষয়ের বেশিরভাগই রাশিয়াকে সুবিধা দিবে বলে অভিযোগ করে ইউক্রেন ও দেশটির মিত্র ইইউ’র নেতারা।
তবে, গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ চুক্তির বিষয়ে সম্মত না হলে ইউক্রেনে মার্কিন সহযোগিতার একটি বড় অংশ বন্ধ হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যেও ব্যস্ততা তৈরি হয় এবং তড়িঘড়ি করে গত রবিবার ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এ অবস্থায় বৈঠকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে রবিবার বিকালে মার্কিন স্বরাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’
তবে, এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় নেতারা। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক তার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে আমরা শান্তি চুক্তির একদম কাছাকাছি রয়েছি।’ অন্যদিকে, এ ধরনের আলোচনা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং এ কারণে চলতি সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্তের সম্ভবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ।
এর আগে খসড়া পরিকল্পনা বিষয়ে তাদের কিছু না জানানোয় আলোচনার টেবিলে বসা নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন ইইউ নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি একত্রে পাল্টা একটি খসড়া প্রস্তাব দেয় - যেখানে রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়াসহ ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের পথ খোলা রাখতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নন বলে জানান মার্কিন স্বরাষ্ট্রসচিব রুবিও। অন্যদিকে, একে ‘পুরোপুরি অর্থহীন’ বলে ইইউ নেতাদের প্রস্তাবিত এ খসড়া পরিকল্পনা বাতিল করে দেন রুশ পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি শাকব।
এদিকে, গতকালকের বৈঠকের পর গৃহীত নতুন শান্তি পরিকল্পনা খসড়াটি রাশিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং একইসঙ্গে খুব শিগগরিই এ নিয়ে জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু, চলতি সপ্তাহে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব নির্ধারিত কোনো বৈঠক নেই বলে ক্রেমলিন থেকে জানানো হয়েছে।
তবে, আজ মঙ্গলবার শান্তি পরিকল্পনার অগ্রগতি নিয়ে জোটের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হবে বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার জানান। একইসঙ্গে, ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য আরও অনেক কাজ বাকি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দেশটির পূর্বাংশের দানবস এলাকা পুরোপুরিভাবে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করে আসছে রাশিয়া। তবে, এ দাবি মেনে নিলে তা ভূখন্ডের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী হবে বলে জানিয়ে আসছে কিয়েভ ও এর ইউরোপীয় মিত্ররা।
একইসঙ্গে, দানবস রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করলে ভবিষ্যতে ইউক্রেন আবারও যেকোনো সময় দেশটির আক্রমণের শিকার হবে বলে বরাবরই সতর্ক করে আসছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
সূত্র : বিবিসি।



